ঢাকা ০১:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

ইরান-ইসরায়েল ব্যাপক হামলা-পাল্টা হামলা

  • আপডেট সময় : ০৯:০৪:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
  • ৫৫ বার পড়া হয়েছে

ইরানের বিমানবন্দরে ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমান -ছবি জেরুজালেম পোস্ট

ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রে ইসরায়েলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ॥ ইরানের ৬ বিমানবন্দরে ইসরায়েলি হামলায় ১৫ যুদ্ধবিমান ধ্বংস ॥ তেহরানে বিপ্লবী গার্ডের সদরদপ্তর-কারাগার ও ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা

প্রত্যাশা ডেস্ক: গত ২৪ ঘণ্টায় ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে ব্যাপক হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। দক্ষিণ ইসরায়েলের একটি ‘কৌশলগত’ বিদ্যুৎ স্থাপনার কাছে ইরান থেকে ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানায় সেখানে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে ইসরায়েল ইলেকট্রিক করপোরেশন (আইইসি)। গতকাল সোমবার (২৩ জুন) এই হামলা চালায় ইরান। টাইমস অব ইসরায়েল এ খবর জানিয়েছে। অন্যদিকে ইরানের পশ্চিম, পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলের ছয়টি বিমানবন্দরে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
আইইসি জানায়, ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের কারণে দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি শহর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আমাদের টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মেরামত ও ঝুঁকি দূরীকরণের কাজ শুরু করে। এসব কার্যক্রম নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বয়ে পরিচালিত হয়। পরে এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, সকালে পাওয়ার স্টেশনের কাছে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার পর বিচ্ছিন্ন হওয়া বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু করা হয়েছে। সব গ্রাহক এখন আবার বিদ্যুৎ পাচ্ছেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) প্রাথমিক মূল্যায়নে বলা হয়, ইরান থেকে ছোড়া ছয় থেকে সাতটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র একাধিক ধাপে প্রায় ৪০ মিনিট ধরে ইসরায়েলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এটি চলমান যুদ্ধের মধ্যে অন্যতম দীর্ঘ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। এই হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে সাইরেন বাজতে শুরু করে। এতে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেট কমিটির বৈঠকগুলো স্থগিত করে আইনপ্রণেতারা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। হোম ফ্রন্ট কমান্ডের সতর্কবার্তা পাওয়ার পর দেশজুড়ে সাইরেন বেজে ওঠে বলে জানায় স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
ইরানের ১৫ যুদ্ধবিমান ধ্বংস: ইরানের পশ্চিম, পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলের ছয়টি বিমানবন্দরে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গতকাল সোমবার (২৩ জুন) সকালে আইডিএফ ঘোষণা করেছে যে, ইরানের আকাশসীমার ওপর আধিপত্য আরো দৃঢ় করতে এই হামলা চালানো হয়েছে। ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট এ খবর জানিয়েছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এই হামলায় রানওয়ে, ভূগর্ভস্থ বাংকার, একটি রিফুয়েলিং এয়ারক্রাফট এবং ইরানি শাসনব্যবস্থার মালিকানাধীন এফ-১৪, এফ-৫ ও এএইচ-১ সহ বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আরো জানায়, ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর ১৫টিরও বেশি যুদ্ধবিমান ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় কেরমানশাহ অঞ্চলে ভূমি-থেকে-ভূমিতে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের গুদাম ও উৎক্ষেপণস্থলগুলোতে হামলা চালিয়েছে।
আইডিএফ জানায়, এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ও সংরক্ষণস্থলগুলো ইসরায়েলি ভূখণ্ডের দিকে নিশানা করে স্থাপন করা হয়েছিল। এ ছাড়া সোমবার সকালে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের কেরমানশাহ এলাকায় সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। ইরানি এক মা এবং তার ৬ বছরের ছেলে সন্তান নিহত হয়েছে বলে ইরানের প্রেস টিভি ও ফার্স সংবাদ সংস্থার বরাতে জানিয়েছে আল-জাজিরা।
তেহরানে বিপ্লবী গার্ডের সদরদপ্তর-কারাগারে হামলা: ইরানের রাজধানী তেহরানে দেশটির ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) সদরদপ্তরে হামলা চালানোর দাবি করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। সোমবারের এই হামলায় আইআরজিসির সৈন্য হতাহত হয়েছেন বলেও দাবি করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন বলেছেন, তেহরানে চলমান ইসরায়েলি হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সদরদপ্তরেও আঘাত হানা হয়েছে। হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাবাহিনী বর্তমানে নজিরবিহীন শক্তির ব্যবহার করে তেহরানের কেন্দ্রস্থলে শাসকগোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তু এবং দমনমূলক প্রতিষ্ঠানে আঘাত হানছে। দেশটির স্বেচ্ছাসেবী সশস্ত্র মিলিশিয়া গোষ্ঠী বাসিজের সদরদপ্তর, এভিন কারাগার, ইসরায়েলকে ধ্বংসের সময়গণনা করা ঘড়ি, বিপ্লবী গার্ডের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সদরদপ্তরসহ আরো কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। তেহরানের রাজনৈতিক বন্দিদের দীর্ঘদিন আটকে রাখার জন্য কুখ্যাত কারাগার হিসেবে পরিচিত এভিন কারাগারে ইসরায়েলি হামলায় প্রাথমিকভাবে কোনো বন্দি হতাহত হননি বলে জানা গেছে। বন্দিদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতেই ইসরায়েলি বাহিনী এই হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তেহরানের প্রাণকেন্দ্রে ২০১৭ সালে একটি ঘড়ি স্থাপন করা হয়। ফিলিস্তিন স্কয়ারে স্থাপিত ওই ঘড়িতে ২০৪০ সালের মধ্যে ইসরায়েলের পতন হবে-এমন বার্তা প্রচার এবং ক্ষণগণনা করা হয়। এই ঘড়িটি লক্ষ্য করেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী। ইরানের বিচার বিভাগের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় তেহরানের এভিন কারাগারের পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেখানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাকে গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সূত্র: এএফপি, টাইমস অব ইসরায়েল।
ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা: ইরানের ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েল আবার হামলা চালিয়েছে। ইরানের কোম প্রদেশের সংকটকালীন ব্যবস্থাপনা বিভাগের সদরদপ্তরের মুখপাত্র মোর্তজা হায়দারি আধা সরকারি তাসনিম বার্তা সংস্থাকে এ খবর জানিয়েছেন।
ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার ৪৮ ঘণ্টা পর সোমবার সেখানে ইসরায়েলও এই হামলা চালাল। ইসরায়েল এর আগে গত ১৩ জুন ইরানে ব্যাপক পরিসরে হামলা শুরু করার সময় পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়েছিল।
গতকাল সোমবার (২৩ জুন) ফর্দোয় আবার ইসরায়েলের হামল হলেও এর কারণে এলাকাটির বাসিন্দাদের জন্য বিপদের কিছু নেই বলে বার্তা সংস্থা তাসনিমকে জানিয়েছেন মোর্তেজা হায়দারি। ইরানের ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনা মাটির অনেক গভীরে অবস্থিত। সেখানটার পারমাণবিক স্থাপনাটি পাহাড় খনন করে তৈরি করা। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের অনুমান, মাটি থেকে ৩০০ ফুট (৯০ মিটার) গভীরে থাকতে পারে স্থাপনাটি।
রোববার ভোরে আকাশপথে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী এই ফর্দো, নাতান্জ় এবং ইসফাহান তিনটি পারমাণবিক স্থাপনাতেই হামলা চালায়। এই হামলায় ফর্দোয় বড়সড় ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে বলে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। তার মধ্যেই এই পারমাণবিক কেন্দ্রটিতে ইসরায়েলের আরেক দফা হামলার খবর এল।

 

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

যে ভাইকে জেল থেকে বের করেছি, সেই আমার স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করল…

ইরান-ইসরায়েল ব্যাপক হামলা-পাল্টা হামলা

আপডেট সময় : ০৯:০৪:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রে ইসরায়েলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ॥ ইরানের ৬ বিমানবন্দরে ইসরায়েলি হামলায় ১৫ যুদ্ধবিমান ধ্বংস ॥ তেহরানে বিপ্লবী গার্ডের সদরদপ্তর-কারাগার ও ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা

প্রত্যাশা ডেস্ক: গত ২৪ ঘণ্টায় ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে ব্যাপক হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। দক্ষিণ ইসরায়েলের একটি ‘কৌশলগত’ বিদ্যুৎ স্থাপনার কাছে ইরান থেকে ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানায় সেখানে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে ইসরায়েল ইলেকট্রিক করপোরেশন (আইইসি)। গতকাল সোমবার (২৩ জুন) এই হামলা চালায় ইরান। টাইমস অব ইসরায়েল এ খবর জানিয়েছে। অন্যদিকে ইরানের পশ্চিম, পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলের ছয়টি বিমানবন্দরে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
আইইসি জানায়, ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের কারণে দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি শহর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আমাদের টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মেরামত ও ঝুঁকি দূরীকরণের কাজ শুরু করে। এসব কার্যক্রম নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বয়ে পরিচালিত হয়। পরে এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, সকালে পাওয়ার স্টেশনের কাছে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার পর বিচ্ছিন্ন হওয়া বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু করা হয়েছে। সব গ্রাহক এখন আবার বিদ্যুৎ পাচ্ছেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) প্রাথমিক মূল্যায়নে বলা হয়, ইরান থেকে ছোড়া ছয় থেকে সাতটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র একাধিক ধাপে প্রায় ৪০ মিনিট ধরে ইসরায়েলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এটি চলমান যুদ্ধের মধ্যে অন্যতম দীর্ঘ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। এই হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে সাইরেন বাজতে শুরু করে। এতে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেট কমিটির বৈঠকগুলো স্থগিত করে আইনপ্রণেতারা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। হোম ফ্রন্ট কমান্ডের সতর্কবার্তা পাওয়ার পর দেশজুড়ে সাইরেন বেজে ওঠে বলে জানায় স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
ইরানের ১৫ যুদ্ধবিমান ধ্বংস: ইরানের পশ্চিম, পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলের ছয়টি বিমানবন্দরে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গতকাল সোমবার (২৩ জুন) সকালে আইডিএফ ঘোষণা করেছে যে, ইরানের আকাশসীমার ওপর আধিপত্য আরো দৃঢ় করতে এই হামলা চালানো হয়েছে। ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট এ খবর জানিয়েছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এই হামলায় রানওয়ে, ভূগর্ভস্থ বাংকার, একটি রিফুয়েলিং এয়ারক্রাফট এবং ইরানি শাসনব্যবস্থার মালিকানাধীন এফ-১৪, এফ-৫ ও এএইচ-১ সহ বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আরো জানায়, ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর ১৫টিরও বেশি যুদ্ধবিমান ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় কেরমানশাহ অঞ্চলে ভূমি-থেকে-ভূমিতে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের গুদাম ও উৎক্ষেপণস্থলগুলোতে হামলা চালিয়েছে।
আইডিএফ জানায়, এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ও সংরক্ষণস্থলগুলো ইসরায়েলি ভূখণ্ডের দিকে নিশানা করে স্থাপন করা হয়েছিল। এ ছাড়া সোমবার সকালে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের কেরমানশাহ এলাকায় সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। ইরানি এক মা এবং তার ৬ বছরের ছেলে সন্তান নিহত হয়েছে বলে ইরানের প্রেস টিভি ও ফার্স সংবাদ সংস্থার বরাতে জানিয়েছে আল-জাজিরা।
তেহরানে বিপ্লবী গার্ডের সদরদপ্তর-কারাগারে হামলা: ইরানের রাজধানী তেহরানে দেশটির ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) সদরদপ্তরে হামলা চালানোর দাবি করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। সোমবারের এই হামলায় আইআরজিসির সৈন্য হতাহত হয়েছেন বলেও দাবি করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন বলেছেন, তেহরানে চলমান ইসরায়েলি হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সদরদপ্তরেও আঘাত হানা হয়েছে। হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাবাহিনী বর্তমানে নজিরবিহীন শক্তির ব্যবহার করে তেহরানের কেন্দ্রস্থলে শাসকগোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তু এবং দমনমূলক প্রতিষ্ঠানে আঘাত হানছে। দেশটির স্বেচ্ছাসেবী সশস্ত্র মিলিশিয়া গোষ্ঠী বাসিজের সদরদপ্তর, এভিন কারাগার, ইসরায়েলকে ধ্বংসের সময়গণনা করা ঘড়ি, বিপ্লবী গার্ডের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সদরদপ্তরসহ আরো কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। তেহরানের রাজনৈতিক বন্দিদের দীর্ঘদিন আটকে রাখার জন্য কুখ্যাত কারাগার হিসেবে পরিচিত এভিন কারাগারে ইসরায়েলি হামলায় প্রাথমিকভাবে কোনো বন্দি হতাহত হননি বলে জানা গেছে। বন্দিদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতেই ইসরায়েলি বাহিনী এই হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তেহরানের প্রাণকেন্দ্রে ২০১৭ সালে একটি ঘড়ি স্থাপন করা হয়। ফিলিস্তিন স্কয়ারে স্থাপিত ওই ঘড়িতে ২০৪০ সালের মধ্যে ইসরায়েলের পতন হবে-এমন বার্তা প্রচার এবং ক্ষণগণনা করা হয়। এই ঘড়িটি লক্ষ্য করেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী। ইরানের বিচার বিভাগের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় তেহরানের এভিন কারাগারের পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেখানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাকে গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সূত্র: এএফপি, টাইমস অব ইসরায়েল।
ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা: ইরানের ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েল আবার হামলা চালিয়েছে। ইরানের কোম প্রদেশের সংকটকালীন ব্যবস্থাপনা বিভাগের সদরদপ্তরের মুখপাত্র মোর্তজা হায়দারি আধা সরকারি তাসনিম বার্তা সংস্থাকে এ খবর জানিয়েছেন।
ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার ৪৮ ঘণ্টা পর সোমবার সেখানে ইসরায়েলও এই হামলা চালাল। ইসরায়েল এর আগে গত ১৩ জুন ইরানে ব্যাপক পরিসরে হামলা শুরু করার সময় পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়েছিল।
গতকাল সোমবার (২৩ জুন) ফর্দোয় আবার ইসরায়েলের হামল হলেও এর কারণে এলাকাটির বাসিন্দাদের জন্য বিপদের কিছু নেই বলে বার্তা সংস্থা তাসনিমকে জানিয়েছেন মোর্তেজা হায়দারি। ইরানের ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনা মাটির অনেক গভীরে অবস্থিত। সেখানটার পারমাণবিক স্থাপনাটি পাহাড় খনন করে তৈরি করা। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের অনুমান, মাটি থেকে ৩০০ ফুট (৯০ মিটার) গভীরে থাকতে পারে স্থাপনাটি।
রোববার ভোরে আকাশপথে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী এই ফর্দো, নাতান্জ় এবং ইসফাহান তিনটি পারমাণবিক স্থাপনাতেই হামলা চালায়। এই হামলায় ফর্দোয় বড়সড় ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে বলে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। তার মধ্যেই এই পারমাণবিক কেন্দ্রটিতে ইসরায়েলের আরেক দফা হামলার খবর এল।