ঢাকা ০৩:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আহমদ ছফা এবং বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী

  • আপডেট সময় : ০৯:১৪:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ জুলাই ২০২২
  • ৮১ বার পড়া হয়েছে

ফয়সাল আহমেদ : আহমদ ছফাকে বাংলাদেশের অনেক বুদ্ধিজীবী-লেখকের স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে ভীষণ কষ্ট হয়। তাঁর প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে পারলে যেনো বেঁচে যান তাঁরা। আহমদ ছফার আলোচিত একটি গ্রন্থ ’বুদ্ধিবৃত্তিক নতুন বিন্যাস’। তবে কোনো এক রহস্যজনক কারণে ছফার ‘বাঙালি মুসলমানের মন’সহ অন্যান্য গ্রন্থগুলো নিয়ে যতোটা আলোচনা হয়, এই গ্রন্থটি নিয়ে তেমন একটা আলোচনা হয় না। ১৯৭২ সালে লেখা এই গ্রন্থটির সর্বশেষ সংস্করণের (১৯৯৭) ভূমিকায় অবশ্য রহস্যের অনেকটা জট খুলে দিয়েছেন আহমদ ছফা নিজেই:
‘মাঝে মাঝে এমন চিন্তাও আমার মনে আসে, লেখাটি যদি না লিখতাম, হয়তো আমার জীবন অন্য রকম হতে পারতো। এই লেখার জন্যই আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীভূক্ত এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীর রোষ আমাকে পেছন থেকে অভিশাপের মতো তাড়া করেছে। অদ্যাবধি আমি জীবনে স্বস্তি কি বস্তু তার সন্ধান পাইনি। আগামীতে কোনোদিন পাবো, সে ভরসাই করিনে। তথাপি এই রচনাটি লেখার জন্য এক ধরনের গর্ব অনুভব করি।’
আহমদ ছফা এই গ্রন্থটিতে মূলত বাংলাদেশের মধ্যশ্রেণীভূক্ত বুদ্ধিজীবীদের দাস মনোবৃত্তি এবং বিদেশী বিভিন্ন এজেন্টদের দ্বারা অর্থ-বিত্ত এবং নানা সুযোগ-সুবিধা লাভের প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন। গ্রন্থটির শুরুতেই তিনি লিখছেন: ‘বুদ্ধিজীবীরা যা বলতেন, শুনলে বাঙলাদেশ স্বাধীন হতো না। এখন যা বলছেন, শুনলে বাঙলাদেশের সমাজ কাঠামোর আমূল পরিবর্তন হবে না।’
আহমদ ছফা কেনো এভাবে লিখছেন গ্রন্থটি পাঠের মধ্যমে, তার বিস্তারিত বিশ্লেষণে গিয়ে আমরা বুদ্ধিজীবীদের চরিত্র সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত হই। ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সুবিধাবাদী উচ্ছিষ্টভোগী বুদ্ধিজীবী এবং তাদের চ্যালাদের কাছে এই গ্রন্থটি খুব বেশি আলোচনায় আসার কথাও নয়। আসেওনি। এই গ্রন্থটিতে আ. লীগ, তার নেতৃত্ব এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের বিশ্লেষণও অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন আহমদ ছফা। গ্রন্থটিতে উঠে এসেছে শিল্প-সাহিত্যের ভূমিকা প্রসঙ্গে গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য। বামপন্থী বা বিপ্লবী রাজনীতি কেনো এই দেশে বিকশিত হলো না সে প্রসঙ্গে ১১টি কারণ চিহ্নিত করেছেন, তা কোনো বামপন্থী তাত্ত্বিক বা সংগঠক অস্বীকার করতে পারবেন বলে মনে হয় না। সব মিলিয়ে দেখলে আহমদ ছফার এই গ্রন্থটির জন্যই কী তাঁকে আরো বিশদভাবে মূল্যায়ন ও পর্যালোলচনা থেকে এখানকার বুদ্ধিজীবীরা সযতনে এড়িয়ে চলেছেন?
তবে এটা ঠিক যে, আহমদ ছফা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে হাঁড়ে হাঁড়ে চিনেছেন। শ্রেণীগতভাবে বুদ্ধিজীবী মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় থেকে আগত ‘শিক্ষিত’ গণবিচ্ছিন্ন একটি গোষ্ঠী। ফরাসি দেশে ‘আঁতেল’ শব্দটি যেমন বুদ্ধিজীবী অর্থে ব্যবহৃত হয়। আমরা আঁতেল বলতে বিশেষ এক গোষ্ঠীকে বুঝে থাকি এবং এই শব্দটি ব্যাঙ্গার্থে ব্যবহৃত হয়। যে কারণে অতি প-িতি বা উপরচালাক ব্যক্তিদের আচরণকেও আমরা অনেকে ‘আতলামি’ বলে থাকি। দেশে দেশে অনেক শব্দের অর্থ যেমন পাল্টে যায়, আমাদের এখানেও ‘আঁতেল’ বা ‘বুদ্ধিজীবী’র শব্দের অর্থও তার একটি বঙ্গীয় অর্থ ধারণ করেছে।
আমরা গতানুগতিক ধারার বুদ্ধিজীবীদের, যা আহমদ ছফা চিহ্নিত করেছিলেন তার মধ্যেই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখবো। অর্থনীতিবিদ, রাষ্ট্রচিন্তাবিদ, শিক্ষক, দার্শনিক, কবি-সাহিত্যিক সকলেই এই অর্থে বুদ্ধিজীবী। আমরা দেখবো, আহমদ ছফা তাঁর ‘বুদ্ধিবৃত্তিক নতুন বিন্যাস’ গ্রন্থে এদের কথাই বলেছেন যে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এই শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীরা যে চিন্তা বা ভূমিকা নিয়েছিলেন তা বাংলাদেশের মানুষ শুনলে বাংলাদেশ স্বাধীনই হতো না। অর্থাৎ বুদ্ধিজীবীরা বিভ্রান্ত ছিলেন স্বাধীনতার প্রশ্নে। দ্বিতীয়ত এখনো যদি আমরা এই বুদ্ধিজীবীদের কথা শুনি বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে না। অর্থাৎ বুদ্ধিজীবী বলতে সমাজ বা মিডিয়া যাদের চিহ্নিত করছে অথবা যারা বুদ্ধিজীবী দাবি করছে তাদের কথা শুনলে বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা কখনোই পরিবর্তন হবে না। এবার আহমদ ছফার এই গুরুত্বপূর্ণ উক্তির সত্যতা কতোটুকু যাচাই করা যাক।
আহমদ ছফা তাঁর ‘বুদ্ধিবৃত্তিক নতুন বিন্যাস’ গ্রন্থের ভূমিকায় লিখছেন: ‘স্বাধীনতার শুরু থেকেই বুদ্ধিজীবীরা একজোট হয়ে শেখ মুজিবের অগণতান্ত্রিক একদলীয় শাসনের বিরুদ্ধে যদি রুখে দাঁড়াতেন তাহলে আমাদের জাতিকে এতোটা পথ পশ্চাত প্রত্যাবর্তন করতে হতো না। যে কোনো দেশের বুদ্ধিজীবীরা যদি রাষ্ট্রযন্ত্রের অনাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে অসম্মত হন সেই দেশটির দুর্দশার অন্ত থাকে না। বাংলাদেশ সেই রকম দুর্দশাগ্রস্থ একটি দেশ। এই দুর্দশা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উদ্যোগ, কোনো প্রয়াস কোথাও পরিদৃশ্যমান নয়।’
বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা সম্পর্কে এর থেকে স্পষ্ট বক্তব্য আর কী হতে পারে? আহমদ ছফা যথার্থভাবে বুদ্ধিজীবীদের চরিত্র চিহ্নিত করেছেন বাংলাদেশের লুন্ঠনের অর্থনীতির বিকাশের মধ্যেই। তিনি ‘বুদ্ধিবৃত্তিক নতুন বিন্যাস’ গ্রন্থের ভূমিকায় এই দেশের লুটেরা পুঁজিপতিদের উত্থান প্রসঙ্গে লিখছেন: ‘শেখ মুজিবের রাজত্বকালে এই কোটিপতিদের জন্ম। জিয়াউর রহমান তাঁদের লালন করেছেন এবং বাড়িয়ে তুলেছেন। এরশাদ সমাজ জীবনে তাঁদের আইনগত বৈধতা দিয়েছেন। হাল আমল পর্যন্ত এসে তাঁরা রাষ্ট্রযন্ত্রটা তাঁদের কব্জার মধ্যে এনে ফেলেছেন। তাঁদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন ছাড়া কোনো সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না। তাঁদের সক্রিয় মদদ ছাড়া কোনো দল সরকার গঠন করতে পারে না। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে ছোটোখাটো দলের সভা কিংবা শোভাযাত্রার জন্য তাঁদের চাঁদার ওপর নির্ভর করতে হয়।’
ছফার পরিষ্কার এই বিশ্লেষণ বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে শতভাগ সত্য ভাষণ। জল নিচের দিকেই গড়ায়। বাংলাদেশের সমাজে আজ যে ভয়াবহ অসুস্থতা ও বিকারগ্রস্থতা সর্বত্র বিরাজমান, তার উৎস কিন্তু উপরে। অর্থাৎ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন, তাদের তাবেদার বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের সংস্কৃতির মাধ্যমেই নিচের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে অপসংস্কৃতি। এ দেশের ছাত্র-শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী-সাহিত্যিকসহ সব পেশাজীবী শ্রেণীর আজকের সংস্কৃতির পেছনে এই লুটেরা অর্থনীতি ও তার ঘনীভূত প্রকাশ রাজনীতির মধ্যেই নিহিত। আহমদ ছফা বাঙালি মুসলমানের চিন্তার দৈন্য এবং পশ্চাৎপদতা সম্পর্কে লিখেছেন অসাধারণ এক পর্যবেক্ষণমূলক প্রবন্ধ ‘বাঙালি মুসলমানের মন’। যদিও এখানে একটা বিশেষ সম্প্রদায়কে, বাঙালি মুসলমানের পশ্চাৎপদতার কারণসমূহ চিহ্নিত করেছেন তিনি। কিন্তু সম্প্রদায় নির্বিশেষে আমরা বলবো, সকল বাঙালির দৈন্যের পেছনের কারণ কিন্তু একই। যদিও বাঙালি মুসলমানের পিছিয়ে থাকার বিশেষ কিছু কারণ যথার্থই চিহ্নিত করেছেন আহমদ ছফা। বিশেষত বাঙালি মুসলমানের পিছিয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধানে, বুদ্ধিজীবীদের চরিত্র চিত্রনে এমন পর্যবেক্ষণের ফলে এটি হয়ে উঠেছে অসাধারণ মূল্যবান একটি গ্রন্থ। এই গ্রন্থটি নিয়েই দীর্ঘ আলোচনার অবকাশ রয়েছে।
ছফার বহুল পঠিত একটি ব্যাঙ্গাত্মক উপন্যাস ‘গাভী বৃত্তান্ত’। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের, বিশেষত সর্বোচ্চ পদাধিকারী উপাচার্যের যে চাটুকারিতা ও নষ্টামির চিত্র এঁকেছেন, সেখানে তিনি আসলে শিক্ষা ও জ্ঞানালোক থেকে সহস্র মাইল দূরে থাকা ভ্রষ্ট শিক্ষকদের চরিত্র চিত্রন করেন। আহমদ ছফা যে সময়ে ‘গাভী বৃত্তান্ত’ লিখেছেন এবং তখনকার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ব্যক্তিকে যেখাবে চিত্রিত করেছেন, বর্তমান সময়ে ভয়ঙ্কর ও নিকৃষ্টরূপে অবনমন ঘটেছে। এখন নতুনরূপে একটি ‘গাভী বৃত্তান্ত’ লেখার সময় এসেছে। ‘গাভী বৃত্তান্ত’ উপন্যাসে ‘বুদ্ধিজীবী’ বলে চিহ্নিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অধঃপতনের চিত্র এর থেকে চমৎকারভাবে বাঙলা সাহিত্যে ইতিপূর্বে লিখিত হয়নি।
বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য এবং বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় সম্পর্কে আহমদ ছফার প্রকাশিত সব সাক্ষাৎকার এক অনন্য সাধারণ সম্পদ। ছফা একটি সাক্ষাৎকারে হুমায়ূন আহমেদ ও সৈয়দ হক সম্পর্কে বলছেন, এঁদের একজনের প্রতারণা হচ্ছে শিশ্নে, আরেকজনের মস্তিস্কে। এক কথায় বাংলাদেশের সাহিত্য জগত সম্পর্কে এই রূপকধর্মী ইঙ্গিতে অনেক কথা বলা হয়ে যায়। বাংলাদেশের সাহিত্য বিশেষত কথাসাহিত্য চর্চা এবং পাঠকের পাঠ প্রবনতায় ব্যতিক্রম বাদে এই দুই জনের বলয় ও অনুকরণের মধ্যেই এখন পর্যন্ত ঘুরপাক খাচ্ছে বলে মনে হয়। এঁদের বলয় থেকে কথাসাহিত্যকে মুক্ত না করলে বাংলাদেশের সাহিত্য অগ্রসর হতে পারবে না।
আহমদ ছফা ‘যদ্যপি আমার গুরু’ গ্রন্থে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের যে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এর সঙ্গে তুলনীয় সাক্ষাৎকার বাংলা ভাষায় খুব বেশি নেই। দুইজন চিন্তকের অসাধারণ কথোপথনে উঠে এসেছে এ দেশের ঐতিহাসিকভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তার ধারাক্রম এবং এই অঞ্চলের সাহিত্যিক, রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীদের চিন্তা-ভাবনা ও কাজের ভূমিকা। সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থশাস্ত্র, দর্শন, বাংলাদেশের সমাজ কাঠামো ইত্যাদি এমন কোনো বিষয় নেই যে, গুরু-শিষ্যের এই আলাপচারিতায় উঠে আসেনি।
আহমদ ছফা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে আত্মত্যাগী ও সততার সঙ্গে সৃজনশীলতার চর্চা যাঁরা করেছেন, তাদের অত্যন্ত উচ্চ মূল্যায়ন করেছেন। দ্বান্দ্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে তুলে এনেছেন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর সামনে। তিনি চিত্রশিল্পী সুলতানকে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন ‘বাঙলার শিল্প ঐতিহ্য: সুলতানের চিত্রসাধনা’ প্রবন্ধে। তিনি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে দ্বান্দ্বিক মূল্যায়ন করেন ‘শত বছরের ফেরারী’ প্রবন্ধে। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও শিল্পসাধনার স্বরূপ উন্মোচিত করেন ‘সংস্কৃতি সাধন’ নামক ছোট্ট প্রবন্ধে। বাট্রান্ড রাসেলের শিক্ষা ও দর্শন নিয়ে আলোচনা করেন ‘বাট্রান্ড রাসেল’ প্রবন্ধে। আহমদ ছফার সকল প্রবন্ধের দিকে দৃষ্টিপাত দিলে লক্ষ্য করা যায় যে, তিনি তুলে আনতে সক্রিয় বাঙলা বা বিশ্বসাহিত্যের বুদ্ধিবৃত্তিক সকল ইতিবাচক সম্পদ। একইসঙ্গে বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের নামে নষ্ট আবর্জনাকে নির্ধিদ্বায় ছুড়ে ফেলতেও তিনি দ্বিধাবোধ করেননি।
অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক আহমদ ছফা সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, ‘ছফার রচনাবলি গুপ্তধনের খনি।’ আহমদ ছফা বিশ্বসাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ গ্যাটের মহাকাব্য ‘ফাউস্ট’ অনুবাদ করেছেন বহু বছরের নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে। তিনি ‘তানিয়া’ অনুবাদ করেছেন। সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস লিখেছেন। অপরদিকে প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্ককে উপজীব্য করে লিখছেন অসাধারণ সৃষ্টিশীল আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ‘পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ-পুরাণ’ এর মতো উপন্যাস। ছোট্ট অথচ দারুণ তাৎপর্যপূর্ণ উপন্যাস ‘ওঙ্কার’ সৃষ্টি হয়েছে ছফার হাতে। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ‘অলাতচক্র’ উপন্যাস লিখছেন যেখানে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনাবলী, দ্বন্দ্ব-বিরোধ এবং প্রেম উপজীব্য। একজন বিশাল নেতার উত্থান-পতন নিয়ে লিখেন ‘একজন আলী কেনানের উত্থান-পতন’ উপন্যাস। এক মন্ত্রীর নষ্টামি, ভন্ডামি যা মন্ত্রিরই স্মৃতিচারণায় উঠে আসে ‘মরণ বিলাস’ উপন্যাসে। আহমদ ছফার প্রত্যেকটি লেখাই তাই একদিকে তাঁর চিন্তার দায়বদ্ধতার সৃষ্টিশীল প্রকাশ, অপরদিকে সমাজের নষ্টামি, ভন্ডামির মুখোশ উন্মোচন করে সুচারু ও দুঃসাহসের সাথে। আহমদ ছফার সব সৃষ্টিকর্মে কবিতা, গল্প, উপন্যাস এবং প্রবন্ধে একইসঙ্গে দ্রোহ ও শিল্পের মিলিত প্রয়াস অসাধারণ বাঙ্ময় হয়ে ওঠে। তাই পরিপূর্ণভাবে একজন লেখককে আবিষ্কার করতে হলে তার সামগ্রিক সৃষ্টিকর্মের সঙ্গে অবগত হওয়া জরুরি। আহমদ ছফাকেও যথার্থ মূল্যায়ন করতে তার রচনাবলীর দ্বারস্থ হওয়ার বিকল্প নেই।
আমার একটি ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণার মধ্য দিয়ে লেখাটি শেষ করবো। অনেকেই জানেন, আহমদ ছফা অত্যন্ত পরোপকারী ছিলেন। শিল্প-সংস্কৃতির অঙ্গনে তাঁর অতি পরিচিত, স্বল্প পরিচিত এমনকি অপরিত কেউ যদি সহযোগিতার জন্য যেতো তিনি তাঁর সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যে টাকা-পয়সা, চাকরির ক্ষেত্রে সুপারিশ, বই প্রকাশ করাসহ নানা বিষয়ে সাধ্যমতো সহযোগিতা করতেন। আমরা ছাত্রাবস্থায় একটি বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশ করতাম নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে। উন্মুক্ত স্থানে অধ্যয়নচক্র এবং সেখানেই লেখা বাছাই বা সম্পাদনার কাজ চলতো। প্রেসওয়ালার বদান্যতায় কখনো প্রেসের মধ্যেই চলতো সম্পাদনার কাজ। একদিন আমাদের এক বন্ধু বলল, ছফা ভাইয়ের কাছে গিয়ে দেখতে পারি, তিনি হয়তো বসার একটা ব্যবস্থা করতে পারেন। আমরা সত্যি সত্যি একদিন তাঁর আজিজ সুপার মার্কেটে দোতলার মাঝের সিঁড়ির সঙ্গে ‘উত্থানপর্বে’র অফিসে উপস্থিত হই। পরিচয় দিয়ে জানাই আমাদের আবদার। সব শুনে তিনি আমাদের তাঁর বাচ্চাদের স্কুলে, শিল্পী সুলতান পাঠশালায়, যেটি আজিজ সুপার মার্কেটেরই তিন তলায় ছিলো, আমাদের সাপ্তাহে তিনদিন ব্যবহার করার অনুমতি দিয়ে দেন।
সেদিন আমরা ভেবেছি, আহমদ ছফার মতো লেখক ও সংগঠকের জন্য এটা একটা দায়িত্ব বটে এবং এটা তাঁর করারই কথা। আজ এতো বছর পর আশেপাশের নষ্টভ্রষ্ট, সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবীদের দিকে তাকিয়ে ভাবছি, ছফা আসলে কতো বড়ো মনের মানুষ ছিলেন! এখন এই সময়ে সাহিত্য ও সংস্কৃতিকর্মীদের পৃষ্ঠপোষকতা দূরে থাক, বিপদ-আপদেও আত্মরতিতে ভোগা বর্তমান সময়ের কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যাবে কিনা, এই বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। আমরা আহমদ ছফার মতো মানুষের শূন্যতা বড়ো বেশি অনুভব করি এই বন্ধ্যা সময়ে।
আমহদ ছফা চর্চায় অনেকে অতি আবেগ এবং অতি উৎসাহী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন মাঝে মাঝে। কেউ কেউ আহমদ ছফার একমাত্র উত্তরাধীকারী সেজে আহমদ ছফাকে অতি মূল্যায়নের মাধমে তাকে বৃক্ষের মগডালে বসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। আহমদ ছফা বেঁচে থাকলে নিশ্চয় তাঁকে এভাবে মগডালে বসিয়ে ‘ভূত’ বানানোর অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আগুন হয়ে ‘ভূত’ সৃষ্টিকারী গুণীনদের তাড়িয়ে দিতেন। আসলে আহমদ ছফা একেবারে মাটির সাথে সম্পৃক্ত একজন লেখক ও মনীষী। আহমদ ছফার সকল লেখালেখি, শিল্প-সাধনা এই মাটি ও মাটিসংলগ্ন মানুষদের নিয়ে। আহমদ ছফা আমাদের বাংলাদেশের মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক জড়তা থেকে মুক্তি এবং সমাজ ব্যবস্থার সার্বিক মুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব।
তবে কেউই সমালোচনার উর্ধ্বে নন। আহমদ ছফাও নন। সমালোচনার জবাব সমালোচনা দিয়েই অনুশীলন করা প্রয়োজন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই দেশে গঠনমূলক সমালোচনার চর্চার ঐতিহ্যই গড়ে উঠলো না আজ পর্যন্ত। এখানে হয় নিন্দার ঝড় বইয়ে দেওয়া হয়, অথবা প্রশংসার সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। দুটোই যে অনাসৃষ্টি তৈরি করে এই বোধই আমাদের নেই।
হাতে গোনা দু’একজন সম্মানিত ব্যক্তি ছাড়া বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত নষ্টামি, রাষ্ট্র ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান এবং এনজিও’র দালালি এবং সুবিধাবাদী চরিত্রের কারণে এদের কাছে প্রত্যাশার আর কিছু নেই। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমরা দেখছি বাংলাদেশের দুর্দশার পেছনে বুদ্ধিজীবীদের নিকৃষ্ট ভূমিকা। আজকের বাংলাদেশের চিত্র আহমদ ছফার বক্তব্যে স্পষ্ট:
‘বর্তমান মুহূর্তে আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠিত বুদ্ধিজীবীরাই হচ্ছেন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শ্রেণী। এরা চিরদিন হুকুম তামিল করতেই অভ্যস্থ। প্রবৃত্তিগত কারণে তারা ফ্যাসিস্ট সরকারকেই কামনা করে। কেননা একমাত্র ফ্যাসিস্ট সরকারই কিছুসংখ্যক বুদ্ধিজীবী সম্মান শিরোপা দিয়ে পুষে থাকে। অল্পসংখ্যক বাছাই করা লোককে দিয়ে নিজেদের প্রচার প্রোপাগান্ডা করিয়ে দেশের জনসমাজের স্বাধীন চিন্তা এবং প্রাণস্পন্দন রুদ্ধ করেই ফ্যাসিবাদ সমাজে শক্ত হয়ে বসে। চিন্তাশূন্যতা এবং কল্পনাশূন্য আস্ফালনই হলো ফ্যাসিবাদের চারিত্র্য লক্ষণ।’
আহমদ ছফার এমন অসাধারণ বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করে আজ পর্যন্ত কোনো ‘বুদ্ধিজীবী’ গঠনমূলকভাবে পাল্টা বক্তব্য দেননি। এতেই আহমদ ছফার বক্তব্যের সারবত্তা, তাঁর লেখনীর সততা এবং শক্তিমত্তার প্রমাণ মেলে। ৩০ জুন এই এই মহান লেখকের জন্মদিন। গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে আহ্বাহন রাখতে চাই, আহমদ ছফা চর্চা প্রসারিত হোক।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার লার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আহমদ ছফা এবং বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী

আপডেট সময় : ০৯:১৪:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ জুলাই ২০২২

ফয়সাল আহমেদ : আহমদ ছফাকে বাংলাদেশের অনেক বুদ্ধিজীবী-লেখকের স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে ভীষণ কষ্ট হয়। তাঁর প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে পারলে যেনো বেঁচে যান তাঁরা। আহমদ ছফার আলোচিত একটি গ্রন্থ ’বুদ্ধিবৃত্তিক নতুন বিন্যাস’। তবে কোনো এক রহস্যজনক কারণে ছফার ‘বাঙালি মুসলমানের মন’সহ অন্যান্য গ্রন্থগুলো নিয়ে যতোটা আলোচনা হয়, এই গ্রন্থটি নিয়ে তেমন একটা আলোচনা হয় না। ১৯৭২ সালে লেখা এই গ্রন্থটির সর্বশেষ সংস্করণের (১৯৯৭) ভূমিকায় অবশ্য রহস্যের অনেকটা জট খুলে দিয়েছেন আহমদ ছফা নিজেই:
‘মাঝে মাঝে এমন চিন্তাও আমার মনে আসে, লেখাটি যদি না লিখতাম, হয়তো আমার জীবন অন্য রকম হতে পারতো। এই লেখার জন্যই আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীভূক্ত এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীর রোষ আমাকে পেছন থেকে অভিশাপের মতো তাড়া করেছে। অদ্যাবধি আমি জীবনে স্বস্তি কি বস্তু তার সন্ধান পাইনি। আগামীতে কোনোদিন পাবো, সে ভরসাই করিনে। তথাপি এই রচনাটি লেখার জন্য এক ধরনের গর্ব অনুভব করি।’
আহমদ ছফা এই গ্রন্থটিতে মূলত বাংলাদেশের মধ্যশ্রেণীভূক্ত বুদ্ধিজীবীদের দাস মনোবৃত্তি এবং বিদেশী বিভিন্ন এজেন্টদের দ্বারা অর্থ-বিত্ত এবং নানা সুযোগ-সুবিধা লাভের প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন। গ্রন্থটির শুরুতেই তিনি লিখছেন: ‘বুদ্ধিজীবীরা যা বলতেন, শুনলে বাঙলাদেশ স্বাধীন হতো না। এখন যা বলছেন, শুনলে বাঙলাদেশের সমাজ কাঠামোর আমূল পরিবর্তন হবে না।’
আহমদ ছফা কেনো এভাবে লিখছেন গ্রন্থটি পাঠের মধ্যমে, তার বিস্তারিত বিশ্লেষণে গিয়ে আমরা বুদ্ধিজীবীদের চরিত্র সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত হই। ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সুবিধাবাদী উচ্ছিষ্টভোগী বুদ্ধিজীবী এবং তাদের চ্যালাদের কাছে এই গ্রন্থটি খুব বেশি আলোচনায় আসার কথাও নয়। আসেওনি। এই গ্রন্থটিতে আ. লীগ, তার নেতৃত্ব এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের বিশ্লেষণও অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন আহমদ ছফা। গ্রন্থটিতে উঠে এসেছে শিল্প-সাহিত্যের ভূমিকা প্রসঙ্গে গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য। বামপন্থী বা বিপ্লবী রাজনীতি কেনো এই দেশে বিকশিত হলো না সে প্রসঙ্গে ১১টি কারণ চিহ্নিত করেছেন, তা কোনো বামপন্থী তাত্ত্বিক বা সংগঠক অস্বীকার করতে পারবেন বলে মনে হয় না। সব মিলিয়ে দেখলে আহমদ ছফার এই গ্রন্থটির জন্যই কী তাঁকে আরো বিশদভাবে মূল্যায়ন ও পর্যালোলচনা থেকে এখানকার বুদ্ধিজীবীরা সযতনে এড়িয়ে চলেছেন?
তবে এটা ঠিক যে, আহমদ ছফা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে হাঁড়ে হাঁড়ে চিনেছেন। শ্রেণীগতভাবে বুদ্ধিজীবী মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় থেকে আগত ‘শিক্ষিত’ গণবিচ্ছিন্ন একটি গোষ্ঠী। ফরাসি দেশে ‘আঁতেল’ শব্দটি যেমন বুদ্ধিজীবী অর্থে ব্যবহৃত হয়। আমরা আঁতেল বলতে বিশেষ এক গোষ্ঠীকে বুঝে থাকি এবং এই শব্দটি ব্যাঙ্গার্থে ব্যবহৃত হয়। যে কারণে অতি প-িতি বা উপরচালাক ব্যক্তিদের আচরণকেও আমরা অনেকে ‘আতলামি’ বলে থাকি। দেশে দেশে অনেক শব্দের অর্থ যেমন পাল্টে যায়, আমাদের এখানেও ‘আঁতেল’ বা ‘বুদ্ধিজীবী’র শব্দের অর্থও তার একটি বঙ্গীয় অর্থ ধারণ করেছে।
আমরা গতানুগতিক ধারার বুদ্ধিজীবীদের, যা আহমদ ছফা চিহ্নিত করেছিলেন তার মধ্যেই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখবো। অর্থনীতিবিদ, রাষ্ট্রচিন্তাবিদ, শিক্ষক, দার্শনিক, কবি-সাহিত্যিক সকলেই এই অর্থে বুদ্ধিজীবী। আমরা দেখবো, আহমদ ছফা তাঁর ‘বুদ্ধিবৃত্তিক নতুন বিন্যাস’ গ্রন্থে এদের কথাই বলেছেন যে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এই শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীরা যে চিন্তা বা ভূমিকা নিয়েছিলেন তা বাংলাদেশের মানুষ শুনলে বাংলাদেশ স্বাধীনই হতো না। অর্থাৎ বুদ্ধিজীবীরা বিভ্রান্ত ছিলেন স্বাধীনতার প্রশ্নে। দ্বিতীয়ত এখনো যদি আমরা এই বুদ্ধিজীবীদের কথা শুনি বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে না। অর্থাৎ বুদ্ধিজীবী বলতে সমাজ বা মিডিয়া যাদের চিহ্নিত করছে অথবা যারা বুদ্ধিজীবী দাবি করছে তাদের কথা শুনলে বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা কখনোই পরিবর্তন হবে না। এবার আহমদ ছফার এই গুরুত্বপূর্ণ উক্তির সত্যতা কতোটুকু যাচাই করা যাক।
আহমদ ছফা তাঁর ‘বুদ্ধিবৃত্তিক নতুন বিন্যাস’ গ্রন্থের ভূমিকায় লিখছেন: ‘স্বাধীনতার শুরু থেকেই বুদ্ধিজীবীরা একজোট হয়ে শেখ মুজিবের অগণতান্ত্রিক একদলীয় শাসনের বিরুদ্ধে যদি রুখে দাঁড়াতেন তাহলে আমাদের জাতিকে এতোটা পথ পশ্চাত প্রত্যাবর্তন করতে হতো না। যে কোনো দেশের বুদ্ধিজীবীরা যদি রাষ্ট্রযন্ত্রের অনাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে অসম্মত হন সেই দেশটির দুর্দশার অন্ত থাকে না। বাংলাদেশ সেই রকম দুর্দশাগ্রস্থ একটি দেশ। এই দুর্দশা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উদ্যোগ, কোনো প্রয়াস কোথাও পরিদৃশ্যমান নয়।’
বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা সম্পর্কে এর থেকে স্পষ্ট বক্তব্য আর কী হতে পারে? আহমদ ছফা যথার্থভাবে বুদ্ধিজীবীদের চরিত্র চিহ্নিত করেছেন বাংলাদেশের লুন্ঠনের অর্থনীতির বিকাশের মধ্যেই। তিনি ‘বুদ্ধিবৃত্তিক নতুন বিন্যাস’ গ্রন্থের ভূমিকায় এই দেশের লুটেরা পুঁজিপতিদের উত্থান প্রসঙ্গে লিখছেন: ‘শেখ মুজিবের রাজত্বকালে এই কোটিপতিদের জন্ম। জিয়াউর রহমান তাঁদের লালন করেছেন এবং বাড়িয়ে তুলেছেন। এরশাদ সমাজ জীবনে তাঁদের আইনগত বৈধতা দিয়েছেন। হাল আমল পর্যন্ত এসে তাঁরা রাষ্ট্রযন্ত্রটা তাঁদের কব্জার মধ্যে এনে ফেলেছেন। তাঁদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন ছাড়া কোনো সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না। তাঁদের সক্রিয় মদদ ছাড়া কোনো দল সরকার গঠন করতে পারে না। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে ছোটোখাটো দলের সভা কিংবা শোভাযাত্রার জন্য তাঁদের চাঁদার ওপর নির্ভর করতে হয়।’
ছফার পরিষ্কার এই বিশ্লেষণ বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে শতভাগ সত্য ভাষণ। জল নিচের দিকেই গড়ায়। বাংলাদেশের সমাজে আজ যে ভয়াবহ অসুস্থতা ও বিকারগ্রস্থতা সর্বত্র বিরাজমান, তার উৎস কিন্তু উপরে। অর্থাৎ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন, তাদের তাবেদার বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের সংস্কৃতির মাধ্যমেই নিচের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে অপসংস্কৃতি। এ দেশের ছাত্র-শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী-সাহিত্যিকসহ সব পেশাজীবী শ্রেণীর আজকের সংস্কৃতির পেছনে এই লুটেরা অর্থনীতি ও তার ঘনীভূত প্রকাশ রাজনীতির মধ্যেই নিহিত। আহমদ ছফা বাঙালি মুসলমানের চিন্তার দৈন্য এবং পশ্চাৎপদতা সম্পর্কে লিখেছেন অসাধারণ এক পর্যবেক্ষণমূলক প্রবন্ধ ‘বাঙালি মুসলমানের মন’। যদিও এখানে একটা বিশেষ সম্প্রদায়কে, বাঙালি মুসলমানের পশ্চাৎপদতার কারণসমূহ চিহ্নিত করেছেন তিনি। কিন্তু সম্প্রদায় নির্বিশেষে আমরা বলবো, সকল বাঙালির দৈন্যের পেছনের কারণ কিন্তু একই। যদিও বাঙালি মুসলমানের পিছিয়ে থাকার বিশেষ কিছু কারণ যথার্থই চিহ্নিত করেছেন আহমদ ছফা। বিশেষত বাঙালি মুসলমানের পিছিয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধানে, বুদ্ধিজীবীদের চরিত্র চিত্রনে এমন পর্যবেক্ষণের ফলে এটি হয়ে উঠেছে অসাধারণ মূল্যবান একটি গ্রন্থ। এই গ্রন্থটি নিয়েই দীর্ঘ আলোচনার অবকাশ রয়েছে।
ছফার বহুল পঠিত একটি ব্যাঙ্গাত্মক উপন্যাস ‘গাভী বৃত্তান্ত’। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের, বিশেষত সর্বোচ্চ পদাধিকারী উপাচার্যের যে চাটুকারিতা ও নষ্টামির চিত্র এঁকেছেন, সেখানে তিনি আসলে শিক্ষা ও জ্ঞানালোক থেকে সহস্র মাইল দূরে থাকা ভ্রষ্ট শিক্ষকদের চরিত্র চিত্রন করেন। আহমদ ছফা যে সময়ে ‘গাভী বৃত্তান্ত’ লিখেছেন এবং তখনকার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ব্যক্তিকে যেখাবে চিত্রিত করেছেন, বর্তমান সময়ে ভয়ঙ্কর ও নিকৃষ্টরূপে অবনমন ঘটেছে। এখন নতুনরূপে একটি ‘গাভী বৃত্তান্ত’ লেখার সময় এসেছে। ‘গাভী বৃত্তান্ত’ উপন্যাসে ‘বুদ্ধিজীবী’ বলে চিহ্নিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অধঃপতনের চিত্র এর থেকে চমৎকারভাবে বাঙলা সাহিত্যে ইতিপূর্বে লিখিত হয়নি।
বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য এবং বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় সম্পর্কে আহমদ ছফার প্রকাশিত সব সাক্ষাৎকার এক অনন্য সাধারণ সম্পদ। ছফা একটি সাক্ষাৎকারে হুমায়ূন আহমেদ ও সৈয়দ হক সম্পর্কে বলছেন, এঁদের একজনের প্রতারণা হচ্ছে শিশ্নে, আরেকজনের মস্তিস্কে। এক কথায় বাংলাদেশের সাহিত্য জগত সম্পর্কে এই রূপকধর্মী ইঙ্গিতে অনেক কথা বলা হয়ে যায়। বাংলাদেশের সাহিত্য বিশেষত কথাসাহিত্য চর্চা এবং পাঠকের পাঠ প্রবনতায় ব্যতিক্রম বাদে এই দুই জনের বলয় ও অনুকরণের মধ্যেই এখন পর্যন্ত ঘুরপাক খাচ্ছে বলে মনে হয়। এঁদের বলয় থেকে কথাসাহিত্যকে মুক্ত না করলে বাংলাদেশের সাহিত্য অগ্রসর হতে পারবে না।
আহমদ ছফা ‘যদ্যপি আমার গুরু’ গ্রন্থে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের যে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এর সঙ্গে তুলনীয় সাক্ষাৎকার বাংলা ভাষায় খুব বেশি নেই। দুইজন চিন্তকের অসাধারণ কথোপথনে উঠে এসেছে এ দেশের ঐতিহাসিকভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তার ধারাক্রম এবং এই অঞ্চলের সাহিত্যিক, রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীদের চিন্তা-ভাবনা ও কাজের ভূমিকা। সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থশাস্ত্র, দর্শন, বাংলাদেশের সমাজ কাঠামো ইত্যাদি এমন কোনো বিষয় নেই যে, গুরু-শিষ্যের এই আলাপচারিতায় উঠে আসেনি।
আহমদ ছফা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে আত্মত্যাগী ও সততার সঙ্গে সৃজনশীলতার চর্চা যাঁরা করেছেন, তাদের অত্যন্ত উচ্চ মূল্যায়ন করেছেন। দ্বান্দ্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে তুলে এনেছেন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর সামনে। তিনি চিত্রশিল্পী সুলতানকে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন ‘বাঙলার শিল্প ঐতিহ্য: সুলতানের চিত্রসাধনা’ প্রবন্ধে। তিনি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে দ্বান্দ্বিক মূল্যায়ন করেন ‘শত বছরের ফেরারী’ প্রবন্ধে। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও শিল্পসাধনার স্বরূপ উন্মোচিত করেন ‘সংস্কৃতি সাধন’ নামক ছোট্ট প্রবন্ধে। বাট্রান্ড রাসেলের শিক্ষা ও দর্শন নিয়ে আলোচনা করেন ‘বাট্রান্ড রাসেল’ প্রবন্ধে। আহমদ ছফার সকল প্রবন্ধের দিকে দৃষ্টিপাত দিলে লক্ষ্য করা যায় যে, তিনি তুলে আনতে সক্রিয় বাঙলা বা বিশ্বসাহিত্যের বুদ্ধিবৃত্তিক সকল ইতিবাচক সম্পদ। একইসঙ্গে বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের নামে নষ্ট আবর্জনাকে নির্ধিদ্বায় ছুড়ে ফেলতেও তিনি দ্বিধাবোধ করেননি।
অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক আহমদ ছফা সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, ‘ছফার রচনাবলি গুপ্তধনের খনি।’ আহমদ ছফা বিশ্বসাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ গ্যাটের মহাকাব্য ‘ফাউস্ট’ অনুবাদ করেছেন বহু বছরের নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে। তিনি ‘তানিয়া’ অনুবাদ করেছেন। সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস লিখেছেন। অপরদিকে প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্ককে উপজীব্য করে লিখছেন অসাধারণ সৃষ্টিশীল আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ‘পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ-পুরাণ’ এর মতো উপন্যাস। ছোট্ট অথচ দারুণ তাৎপর্যপূর্ণ উপন্যাস ‘ওঙ্কার’ সৃষ্টি হয়েছে ছফার হাতে। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ‘অলাতচক্র’ উপন্যাস লিখছেন যেখানে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনাবলী, দ্বন্দ্ব-বিরোধ এবং প্রেম উপজীব্য। একজন বিশাল নেতার উত্থান-পতন নিয়ে লিখেন ‘একজন আলী কেনানের উত্থান-পতন’ উপন্যাস। এক মন্ত্রীর নষ্টামি, ভন্ডামি যা মন্ত্রিরই স্মৃতিচারণায় উঠে আসে ‘মরণ বিলাস’ উপন্যাসে। আহমদ ছফার প্রত্যেকটি লেখাই তাই একদিকে তাঁর চিন্তার দায়বদ্ধতার সৃষ্টিশীল প্রকাশ, অপরদিকে সমাজের নষ্টামি, ভন্ডামির মুখোশ উন্মোচন করে সুচারু ও দুঃসাহসের সাথে। আহমদ ছফার সব সৃষ্টিকর্মে কবিতা, গল্প, উপন্যাস এবং প্রবন্ধে একইসঙ্গে দ্রোহ ও শিল্পের মিলিত প্রয়াস অসাধারণ বাঙ্ময় হয়ে ওঠে। তাই পরিপূর্ণভাবে একজন লেখককে আবিষ্কার করতে হলে তার সামগ্রিক সৃষ্টিকর্মের সঙ্গে অবগত হওয়া জরুরি। আহমদ ছফাকেও যথার্থ মূল্যায়ন করতে তার রচনাবলীর দ্বারস্থ হওয়ার বিকল্প নেই।
আমার একটি ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণার মধ্য দিয়ে লেখাটি শেষ করবো। অনেকেই জানেন, আহমদ ছফা অত্যন্ত পরোপকারী ছিলেন। শিল্প-সংস্কৃতির অঙ্গনে তাঁর অতি পরিচিত, স্বল্প পরিচিত এমনকি অপরিত কেউ যদি সহযোগিতার জন্য যেতো তিনি তাঁর সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যে টাকা-পয়সা, চাকরির ক্ষেত্রে সুপারিশ, বই প্রকাশ করাসহ নানা বিষয়ে সাধ্যমতো সহযোগিতা করতেন। আমরা ছাত্রাবস্থায় একটি বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশ করতাম নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে। উন্মুক্ত স্থানে অধ্যয়নচক্র এবং সেখানেই লেখা বাছাই বা সম্পাদনার কাজ চলতো। প্রেসওয়ালার বদান্যতায় কখনো প্রেসের মধ্যেই চলতো সম্পাদনার কাজ। একদিন আমাদের এক বন্ধু বলল, ছফা ভাইয়ের কাছে গিয়ে দেখতে পারি, তিনি হয়তো বসার একটা ব্যবস্থা করতে পারেন। আমরা সত্যি সত্যি একদিন তাঁর আজিজ সুপার মার্কেটে দোতলার মাঝের সিঁড়ির সঙ্গে ‘উত্থানপর্বে’র অফিসে উপস্থিত হই। পরিচয় দিয়ে জানাই আমাদের আবদার। সব শুনে তিনি আমাদের তাঁর বাচ্চাদের স্কুলে, শিল্পী সুলতান পাঠশালায়, যেটি আজিজ সুপার মার্কেটেরই তিন তলায় ছিলো, আমাদের সাপ্তাহে তিনদিন ব্যবহার করার অনুমতি দিয়ে দেন।
সেদিন আমরা ভেবেছি, আহমদ ছফার মতো লেখক ও সংগঠকের জন্য এটা একটা দায়িত্ব বটে এবং এটা তাঁর করারই কথা। আজ এতো বছর পর আশেপাশের নষ্টভ্রষ্ট, সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবীদের দিকে তাকিয়ে ভাবছি, ছফা আসলে কতো বড়ো মনের মানুষ ছিলেন! এখন এই সময়ে সাহিত্য ও সংস্কৃতিকর্মীদের পৃষ্ঠপোষকতা দূরে থাক, বিপদ-আপদেও আত্মরতিতে ভোগা বর্তমান সময়ের কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যাবে কিনা, এই বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। আমরা আহমদ ছফার মতো মানুষের শূন্যতা বড়ো বেশি অনুভব করি এই বন্ধ্যা সময়ে।
আমহদ ছফা চর্চায় অনেকে অতি আবেগ এবং অতি উৎসাহী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন মাঝে মাঝে। কেউ কেউ আহমদ ছফার একমাত্র উত্তরাধীকারী সেজে আহমদ ছফাকে অতি মূল্যায়নের মাধমে তাকে বৃক্ষের মগডালে বসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। আহমদ ছফা বেঁচে থাকলে নিশ্চয় তাঁকে এভাবে মগডালে বসিয়ে ‘ভূত’ বানানোর অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আগুন হয়ে ‘ভূত’ সৃষ্টিকারী গুণীনদের তাড়িয়ে দিতেন। আসলে আহমদ ছফা একেবারে মাটির সাথে সম্পৃক্ত একজন লেখক ও মনীষী। আহমদ ছফার সকল লেখালেখি, শিল্প-সাধনা এই মাটি ও মাটিসংলগ্ন মানুষদের নিয়ে। আহমদ ছফা আমাদের বাংলাদেশের মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক জড়তা থেকে মুক্তি এবং সমাজ ব্যবস্থার সার্বিক মুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব।
তবে কেউই সমালোচনার উর্ধ্বে নন। আহমদ ছফাও নন। সমালোচনার জবাব সমালোচনা দিয়েই অনুশীলন করা প্রয়োজন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই দেশে গঠনমূলক সমালোচনার চর্চার ঐতিহ্যই গড়ে উঠলো না আজ পর্যন্ত। এখানে হয় নিন্দার ঝড় বইয়ে দেওয়া হয়, অথবা প্রশংসার সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। দুটোই যে অনাসৃষ্টি তৈরি করে এই বোধই আমাদের নেই।
হাতে গোনা দু’একজন সম্মানিত ব্যক্তি ছাড়া বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত নষ্টামি, রাষ্ট্র ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান এবং এনজিও’র দালালি এবং সুবিধাবাদী চরিত্রের কারণে এদের কাছে প্রত্যাশার আর কিছু নেই। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমরা দেখছি বাংলাদেশের দুর্দশার পেছনে বুদ্ধিজীবীদের নিকৃষ্ট ভূমিকা। আজকের বাংলাদেশের চিত্র আহমদ ছফার বক্তব্যে স্পষ্ট:
‘বর্তমান মুহূর্তে আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠিত বুদ্ধিজীবীরাই হচ্ছেন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শ্রেণী। এরা চিরদিন হুকুম তামিল করতেই অভ্যস্থ। প্রবৃত্তিগত কারণে তারা ফ্যাসিস্ট সরকারকেই কামনা করে। কেননা একমাত্র ফ্যাসিস্ট সরকারই কিছুসংখ্যক বুদ্ধিজীবী সম্মান শিরোপা দিয়ে পুষে থাকে। অল্পসংখ্যক বাছাই করা লোককে দিয়ে নিজেদের প্রচার প্রোপাগান্ডা করিয়ে দেশের জনসমাজের স্বাধীন চিন্তা এবং প্রাণস্পন্দন রুদ্ধ করেই ফ্যাসিবাদ সমাজে শক্ত হয়ে বসে। চিন্তাশূন্যতা এবং কল্পনাশূন্য আস্ফালনই হলো ফ্যাসিবাদের চারিত্র্য লক্ষণ।’
আহমদ ছফার এমন অসাধারণ বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করে আজ পর্যন্ত কোনো ‘বুদ্ধিজীবী’ গঠনমূলকভাবে পাল্টা বক্তব্য দেননি। এতেই আহমদ ছফার বক্তব্যের সারবত্তা, তাঁর লেখনীর সততা এবং শক্তিমত্তার প্রমাণ মেলে। ৩০ জুন এই এই মহান লেখকের জন্মদিন। গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে আহ্বাহন রাখতে চাই, আহমদ ছফা চর্চা প্রসারিত হোক।