জান্নাতুল বাকেয়া কেকা : আমাদের সোনার ছেলেরা বাঙালির স্বাধীনতার চেতনাকে সেই সূচনালগ্ন থেকেই জনমানুষের বোধের জায়গায় ধাক্কা দিয়ে জাগরুক রেখেছে। ইতিহাস সাক্ষী, ১৯৪৭-এর পর থেকে বাঙালি মুসলমানেরা ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের আনন্দে এতটাই মশগুল ছিল যে তাদের ওপর চালানো নানান শোষণ বৈষম্য গায়ে লাগেনি। পরবর্তীতে নিজ মাতৃভাষা বাংলার ওপর আঘাত এলেও ভাষার মর্যাদার দাবি প্রতিষ্ঠায় কোনও তাগিদই ছিল না বাঙালি আমজনতার। ধর্মভিত্তিক বিভাজনের মাধ্যমে বৃহৎ জাতি, রাষ্ট্র ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম যে আরেক নব্য ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের হাতিয়ার ছিল এই বাস্তব সত্যটা প্রথম উপলব্ধি করেছিল এ দেশের ছাত্রসমাজ। যারা ১৯৪৮ সালে প্রথম নিজ ভাষা বাংলার অমর্যাদার বিষয়টিতে প্রতিক্রিয়া দেখান। সেই প্রথম বাঙালি নিজের অধিকারের প্রশ্নে জ্বলে ওঠে। সেখান থেকে ১৯৫২ সালের অমর একুশের রক্তক্ষয়ী ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহাসিক পটভূমি। যা বিশ্বের বুকে বাঙালির বীরত্বগাথায় রচিত করেছে ছাত্র আন্দোলনের অমর কাব্য।
পরবর্তীতে বাংলা ভাষার স্বীকৃতির এক দাবি থেকে বাঙালির স্বাধীনতার চেতনায় উদীপ্ত হয়ে ওঠার জন্য পুরো বাঙালিকে সম্পৃক্ত করতে সময় লেগেছে দীর্ঘ ২৩ বছর। এই দীর্ঘ পরিক্রমায় সোচ্চার হয়ে আমজনতাকে নিজেদের অধিকার আদায়ে উজ্জীবিত করেছিল সাধারণ ছাত্ররাই। রাজনীতিকরা ওই আন্দোলনে যুক্ত হয়ে চূড়ান্ত লক্ষ্যে নিয়ে গেছেন, ততদিনে সাধারণ আমজনতাও সম্পৃক্ত হয়েছে। সেই ধারায় ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছিল স্বাধীন দেশে গণতন্ত্রের ধারায় ফেরানোর নতুন প্রেক্ষাপট। সাধারণ ছাত্র আন্দোলনের এতসব সফল ও ঐতিহ্যের দৃষ্টান্তের এই পবিত্র ভূমে ২০২৪ সালে জুলাই মাসে দেশবাসী দেখেছে ছাত্র আন্দোলনের ভিন্নরূপ। কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্র-শিক্ষার্থীরা চাকরিতে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে সারা দেশের সাধারণ স্কুল কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থী-ছাত্রসমাজকে সম্পৃক্ত করে।
আমরা দেখেছি প্রথাগত ছাত্র রাজনীতির বাইরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে তারা সংগঠিত হয়েছে। আর আপাত মনে হয়েছে ছাত্ররা কোনও রাজনৈতিক দল ও মতের বাইরে গিয়ে নিজেদের মতো করেই সংগঠিত হয়েছে। কেননা, ছাত্রদের এই প্ল্যাটফর্মটি কোনও রাজনৈতিক দল বা মতের এই বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে সামনে আসেনি। ধরেই নিতে পারি যে ছাত্র-শিক্ষার্থীদের এই ব্যানারটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাধারণ ছাত্ররাই অংশ নিয়েছে। এদিক দিয়ে এবারের ছাত্র আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য আগের যেকোনও ছাত্র আন্দোলনের বিচারে একেবারেই ভিন্ন। আবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাত ধরেই দেশব্যাপী খুব দ্রুত এবং অপেক্ষাকৃত কম সময়ে আন্দোলন ব্যাপক মাত্রা পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য বটে। যদিও এর আগে ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল, কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছিল। ওই সময়ে ছাত্রদের সংগঠিত করার প্রেক্ষাপট ছিল দুঃখবহ– সড়কে মৃত্যুর মিছিলে প্রায় প্রতিদিনই ঘটে চলছিল স্বজন হারানোর বেদনায় মাতম। স্কুলশিক্ষার্থী, বন্ধু ও স্বজন হারানো ব্যথিত শিক্ষার্থীরা প্রতিকার চেয়ে নেমে আসে রাজপথে।
এবারের ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুটি বৈশিষ্ট্য- সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা এবং দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া। শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের মাধ্যম ঘটনার শুভসমাপ্তি হতেই পারতো। এমনটা ঘটলে নিঃসন্দেহে এবারের ছাত্র আন্দোলন তুলনাযোগ্য হতে পারতো আজ থেকে ৩৫ বছর আগে ১৯৮৯ সালে চীনের বেইজিংয়ের তিয়াননমেন স্কয়ারের ছাত্র বিক্ষোভের ঘটনার ঐতিহাসিক কাতারে। কারণ বেইজিংয়ের ওই ছাত্র আন্দোলনের ন্যায় এ দেশের শিক্ষার্থীরাও চাকরির মাঠে বিভিন্ন বৈষম্যের নিরসন চেয়েই মাঠে নামে। তবে শিক্ষার্থীদের কিঞ্চিৎ বোধের সীমাবদ্ধতার কারণে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিপক্ষে কিছু উক্তি ও স্লোগান একাত্তরের পক্ষের শক্তিদের খানিক মর্মাহত ও বিচলিত করে।
আবার যেহেতু কোনও রাজনৈতিক মত ও পথের বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে, এ কারণে খানিক অগোছালো, নেতৃত্বহীনতা এবং সমন্বয়ের অভাব ছিল। এ কারণেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন একাধিক সুযোগসন্ধানী গ্রুপ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রাজনৈতিক মাঠের কৌশলে ‘তুরুপের তাস’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই এ দেশে নজিরবিহীন সহিংসতায় জ্বালাও পোড়াও, রাষ্ট্রীয় সম্পদ-স্থাপনায় ভাঙচুর ছাড়াও দেড় শতাধিক মৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এর জন্য ছাত্র-শিক্ষার্থীদের ঐতিহাসিক কোটাবিরোধী আন্দোলনের দায় যতটা, এর চেয়ে হাজার গুণ বেশি দায় বিভিন্ন সুযোগসন্ধানী ঘাপটি মেরে থাকা রাজনৈতিক অপশক্তি এবং সমানভাবে ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের। কারণ ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগ দল ও ক্ষমতাসীন শাসকেরা ঘটনার গুরুত্ব সময়মত উপলব্ধি করতে পারেননি। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরাও সরকারের ওপর আস্থাশীল না হয়ে অনমনীয় থেকেছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় সাধারণ আমজনতা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে আমলে না নিয়ে চলতে গিয়ে অনেকটাই স্বৈরাচারী মনোভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন দল। ফলে কোভিড-১৯ পরবর্তী বৈশ্বিকভাবে বাজার ব্যবস্থায় নাকাল দেশে দেশে চলা মুদ্রাস্ফীতি, জিনিসপত্রের লাগামহীন মূল্য কীভাবে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষদের ক্ষোভের কারণ হচ্ছে তা বুঝেও যেন বোঝেন না। এর মধ্যে দেশে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির চালচিত্র, প্রতিদিনের জাতীয় দৈনিকে মানুষের মধ্যে রাগ-ক্ষোভ, না পাওয়ার বেদনায় ভারাক্রান্ত হওয়ার কথা প্রকাশ হলেও তা প্রশমন করবে কে?
এই বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিজেদের ‘রাজাকার’ বলা বা না বলার সেই বিতর্ক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে রণহুংকারে রূপ নিয়েছে। একাত্তরের পরাজিত শক্তির প্রতিভূরা আন্দোলন ছিনিয়ে নিজেদের রণসজ্জার ঘুঁটি সাজিয়েছে নিঃসন্দেহে।
আবার রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ, নিরস্ত্র ছাত্র সাঈদকে গুলির ঘটনায় পুলিশি অ্যাকশন উসকানি যে আগুনে ঘি ঢেলেছে– এটা কেন, কে ঘটালো? সাঈদ হত্যায় জড়িত সংশ্লিষ্ট পুলিশকে দ্রুত বিচারের আওতায় এনে বস্তুনিষ্ঠ তদন্তে ঘটনার আসল মোটিভ উন্মোচন জরুরি। কোটাবিরোধী আন্দোলন সহিংসতায় শিক্ষার্থী ছাড়াও পথচারী, সাধারণ আমজনতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, এমনকি ঘরে-বারান্দায় থাকা শিশুর করুণ মৃত্যু আমাদের বিচলিত করেছে। চাকরিপ্রার্থী না হয়েও ভবিষ্যতে জ্বলে ওঠা মেধাবী স্কুলশিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যুর ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে শত শত অপ্রাপ্ত বয়সী স্কুলশিক্ষার্থী এবং তাদের শিক্ষকেরাও কোটাবিরোধী আন্দোলনে শরিক ছিলেন। শিক্ষার্থীদের মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ করলে সহজেই বোঝা যায়, এক শিক্ষার্থী যখন রাজপথে পুলিশি হামলায় আক্রান্ত হচ্ছে তখন সমব্যথী হয়ে অসম বয়সী বা প্রাপ্ত বয়সী শিক্ষার্থীকে ভারাক্রান্ত করছে দারুণ আবেগে। সেই আবেগে সারা দেশের স্কুলশিক্ষার্থীরাও ঘর ছেড়েছে। তখন অনেক অভিভাবকই কোনও রাজনৈতিক মত-পথের পথিক না হয়েও শুধু আবেগ তাড়িত নিজ সন্তানদের ঘরে আটকে রাখতে না পারায় প্রিয় সন্তানের পিছু নিয়েছিলেন।
এমন অনেক অভিভাবকই প্রিয় সন্তানের পেছনে দিনভর ছুটেছেন। একটিই কারণ, আবেগ তাড়িত সন্তানকে ঘরে আটকে রাখতে না পারলেও অন্তত তার সন্তান কোথায় যাচ্ছেন সেই খোঁজটি অভিভাবক হিসেবে সন্তানদের মঙ্গলচিন্তায় বিচলিত হয়ে পথেই থেকেছেন। সন্তান যদি কোনও কারণে আক্রান্ত হয় তখন যেন অন্তত জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারেন– এমন বাস্তব অবস্থায় বহু অভিভাবক, ‘বাবা আর যাস না, বাসায় আয়’ করে সন্তানের পেছনে পেছনে রাজপথে ঘুরেছেন। এভাবেই রাজপথে এক সাধারণ শিক্ষার্থীর জন্য যেমন বড় ভাই ছুটেছেন, একইভাবে কারও ক্ষেত্রে মা-বাবাও পাগলের মতো ছুটে বেড়িয়েছেন। অবস্থাদৃষ্টে রাজপথে মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী ‘ছাত্র আন্দোলন’ মানে যৌক্তিক দাবিতে ‘অবুঝ আবেগ, বাস্তববোধ ও বৈষয়িক চিন্তার ঊর্ধ্বে ওঠা মরিয়া এক গোষ্ঠী। এই শিক্ষার্থীরা প্রাণ দিতে পিছপা হয় না। ১৩ থেকে ২০-২২ বছরের এমন আবেগী তরুণেরাই তো গেছে ১৯৭১-এর সম্মুখ লড়াইয়ে। যারা যুক্তির বিচারের প্রাণের মায়ায় হারতে জানে না।
এর বাইরে একটি বৃহৎ অংশই রাজনৈতিক মত ও পথের কান্ডারি হতেই পারে। যারা রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের কামনায় মাঠে ছিলেন। সর্বোপরি ছিনতাই হওয়া আন্দোলনে সেই আগেই তো সরব ছিল ভাড়াটেরা– যারা ঘর পোড়া আগুনে আলু পোড়া খেতে সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। এমন বাস্তবতায় সারা বিশ্বের ‘স্টুডেন্ট মুভমেন্ট’র স্বরূপ বিশ্লেষণ করে আমাদের করণীয় নির্ধারণ ও কর্মতৎপরতা জরুরি। সমব্যথী মনোভাবে ক্ষতে মলম দিয়েই এগোতে হবে। এর জন্য রাজনৈতিকভাবে পরমত সহিষ্ণুতা যেমন জরুরি, তেমনি প্রথার বাইরে সাধারণ ছাত্র-শিক্ষার্থীদের সংগঠিত আন্দোলনে জ্বলে ওঠার ক্ষমতার মাহাত্ম্য আমলে নেওয়া প্রয়োজন। কারণ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বারুদের মতো স্পর্শকাতর ‘ছাত্র আন্দোলন’ বারবারই রাজনৈতিক মত-পথের নানান কৌশলীরা ছিনতাই করবেই করবে। আর তাদের দমনে কত কারফিউ জারি হবে কিংবা কতদিন সেনাবাহিনী থাকবে রাজপথে? দেশজুড়ে জ্বালাও-পোড়াও জীবনের দাম, পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পদ ভাঙচুরের দায় আর কত বইবে সাধারণ আমজনতা? মৃত্যুর মিছিলে দেড়শ’ দুইশ’ এভাবে মৃত্যুর গণনায় বাড়বে রাগ ও ক্ষোভ। উসকে দেবে বেদনার পাহাড়ে ব্যথিতদের যাতনা। তাই দল আওয়ামী লীগের এবং ক্ষমতাসীন সরকারের সামনে এখন দুটিই বড় চ্যালেঞ্জ:
প্রথমত: নিজ রাজনৈতিক মতাদর্শের বাইরের বিপুল সংখ্যক ভিন্নমতধারীদের সামাল দেওয়া। এর জন্য ভিন্নমত ও মতাদর্শকে দমন নয়, সুযোগ দিন। তাদের কথা শুনুন। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে নিজেদের অংশীদার করে উন্নয়ন ইস্যুতে একসঙ্গে পথ চলুন। সাধারণ ছাত্র আন্দোলনের শক্তিকে আমলে নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতি সমবেদনায় বিভিন্ন দল ও মত নিয়ে রাজনৈতিকভাবেই সমাধান খুঁজুন। কারণ ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই এ দেশে যা ঘটেছে, এই ক্ষতে মলম না দিলে আর কখনোই ১৫ জুলাইয়ের আগের বাংলাদেশ ফিরবে কি?
দ্বিতীয়ত, দেশের সাধারণ সব মানুষের জীবনমান পরিবর্তনে জোরদার কাজ করুন। শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, মনস্তাত্ত্বিক উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে। এর জন্য এ দেশের ৩০ শতাংশ ধনীরা আরও ধনী হবে আর ৭০ শতাংশ মানুষ চেয়ে চেয়ে দেখবে- এমন বাস্তবতার অবসান দরকার। তা না হলে এক মেট্রোরেলের মতো অসাধারণ উন্নয়নের মাহাত্ম্য হৃদয়াঙ্গম করবে যে আমজনতা তাদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টিগত উন্নয়নের মাধ্যমই তো ৭০ শতাংশ মানুষের চিন্তাধারা এক কাতারে আসবে। একটি দেশে ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, উড়াল সেতুর গুরুত্ব উপলব্ধিতে দেশের আমজনতার চিন্তায় সমতা তৈরিতে এখন থেকেই মনোযোগী হতে হবে। ওই ৭০ শতাংশ মানুষের স্বাস্থ্যগত মান উন্নয়ন, পুষ্টির বিন্যাস তথা সুষম খাবারের জোগান, সর্বোপরি শিক্ষার সুযোগ, এভাবেই একই সমান্তরালে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে একরকম চিন্তা বা ‘চিন্তার সমতায়’ আনা জরুরি।
মানুষের জীবনমান তথা বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, সর্বোপরি সুষম খাদ্য ঘাটতি নিয়ে সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। রাজনৈতিক মত ও পথের ভিন্নতার সঙ্গে অপুষ্টি ও রোগে ভোগে চিন্তার ভিন্নতা নিয়ে দেশের এত এত উন্নয়ন আমজনতার কাছে কাঙ্ক্ষিত হবে না। মেট্রোসহ উন্নয়নের স্মারক নানান সরকারি স্থাপনায় নগ্ন হামলা এটাই প্রমাণ করেছে। তাই বরাবরের মতো একাত্তর, স্বাধীনতা, একাত্তরের পরাজিত ও পক্ষের শক্তি এসব স্লোগানে মানুষের মন এখন আর ভিজবে না। পেটে ক্ষুধা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা এসব বোধে মানুষের মন উজ্জীবিত হয় না। তাই সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৫ শতাংশ বরাদ্দ আইনগতভাবে করে সেই বার্তাই দিয়েছে। তাই আর একাত্তরের পরাজিত শক্তি কিংবা স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ স্লোগানে বিভাজন নয়। আসুন কৃষক, শ্রমজীবী, স্বল্প আয়ের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করি, কান পেতে শুনি মানুষের ন্যূনতম চাওয়া পাওয়া। তবেই আমজনতা উন্নয়নের পরম পাথরে নিজেকে একাত্ম করবে, নিজেরাই রাষ্ট্রীয় সম্পদে আর ভাঙচুর চালাবে না। বরং নিজেদের প্রাণ দিয়েই রক্ষা করবে। আসুন দেশ গড়ায় দেশের ৭০ শতাংশ আমজনতাকে পাশে নিয়ে চলি, চাটুকার আর সুযোগসন্ধানীদের ত্যাগ করি। তা না হলে ১৫ জুলাই ২০২৪-এর আগের বাংলাদেশ আর ফিরবে না।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক