রাঙামাটি সংবাদদাতা : রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বৈরী আবহাওয়া ও আইনশৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কায় পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ রবিবার (৯ জুন) এই উপজেলায় ভোট হওয়ার কথা ছিল। গতকাল শনিবার (৮ জুন) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মো. মনির হোসেন। তিনি জানান, এর আগে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের তৃতীয় ধাপে গত ২৯ মে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। এটিই পরে ৯ জুন হওয়ার কথা ছিল। বৈরী আবহাওয়া ও আইনশৃঙ্খলা অবনতির শঙ্কা দেখে দেওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত করে কমিশন। পরে উপযুক্ত সময়ে কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে, ভোটের আগের দিন ‘সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ’ নিবার্চনের দাবিতে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধের ডাক দেয় পাহাড়ের আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। তবে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাওয়ায় বেলা ১২টা থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয় সংগঠনটি। এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ২, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএনলারমা) সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা (ঘোড়া)। অপর প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ইতিময় চাকমা অলিভ (আনারস) প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। অলিভ চাকমাকে স্থানীয় আঞ্চলিক সংগঠন সন্তু লারমা জেএসএস ও ইউপিডিএফ সমর্থন দেওয়ায় নির্বাচনকে ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মো. বেলাল হোসেন দাবি করেছেন, নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছিল। ইতোমধ্যে হেলিসর্টি ৬টি কেন্দ্রের মধ্যে শুক্রবার (৭ জুন) তিনটি কেন্দ্রের নির্বাচনি সরঞ্জাম ও লোকবল চলে গিয়েছে। আজ বাকিদের যাওয়ার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে নির্বাচন স্থগিতের খবর আসে। তিনি আরও জানান, নির্বাচনের দিন ৩৪টি ভোটকেন্দ্রে ১৭ প্লাটুন বিজিবি, প্রতিকেন্দ্রে ৮ জন করে পুলিশ এবং প্রতি ইউনিয়নে একজন করে নয় জন ম্যাজিস্ট্রেট ও একটি করে টহল টিম মাঠে থাকবে। নির্বাচন উপলক্ষে পর্যাপ্ত পরিমাণ আনসার ও ভিডিপি মোতায়ন করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষে ফেরার পথে দুর্বৃত্তের গুলিতে ৮ জন নিবার্চনকর্মী, শিক্ষক ও আনসার সদস্য নিহত হন।
সাজেকে আটকে ছিল ৩ শতাধিক পর্যটক
রাঙামাটি সংবাদদাতা জানান, রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সকাল-সন্ধ্যা অবরোধের কারণে পর্যটন নগরী সাজেকে প্রায় তিন শতাধিক পর্যটক সকাল থেকে আটক পড়েছিল। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় শনিবার (০৮ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পর্যটকবাহী যানগুলো সাজেক ছেড়েছে। পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ বলেন, ইউপিডিএফ’র অবরোধে পর্যটকরা সকাল থেকে সাজেকে আটকা পড়েছিল। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় পর্যটকদের সাজেক থেকে তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে উপজেলার রূপকারী ইউনিয়নের আটকিলো নামক এলাকায় ইউপিডিএফ’র কর্মীরা একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এসময় মোটরসাইকেল চালক মো. আলম নামের এক যুবক আহত হন। এ ঘটনার পর উপজেলা শহরের স্থানীয় জনসাধারণ হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর এজেন্টকে হুমকি ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বাঘাইছড়িতে শনিবার সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ পালন করেছে ইউপিডিএফ।