বিশেষ সংবাদদাতা : ডলার সংকটে ভারতের আদানিকে বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ পাওনা অর্থের আংশিক পরিশোধ বা পার্সিয়াল পেমেন্ট করা হচ্ছে। আপাতত দেওয়া হচ্ছে বকেয়ার পাঁচ ভাগের একভাগ। যদিও ডলার সংকটে এই অর্থ কবে নাগাদ আদানির হিসাবে জমা হবে তা নিশ্চিত নয়। জানা গেছে, বড় অঙ্কের বকেয়া জমেছে আদানি পাওয়ারের। ভারতের গোড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আদানি বাংলাদেশে সরকারের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করে। পিডিবি বলছে, গত জুন মাসে আদানিকে সব শেষ বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এখন আদানির বাংলাদেশের কাছে বকেয়া রয়েছে ৫৪ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। পিডিবি এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডলার সংকট এবং ভর্তুকির অর্থ না পাওয়াতে আদানিসহ অন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বকেয়া বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না।
পিডিবি এখন প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে ১২ টাকা ১৩ পয়সায়। কিন্তু বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ৭০ পয়সায়। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে ঘাটতি থাকে ৫ টাকা ৪৩ পয়সা। অর্থাৎ বিদ্যুৎ বিক্রি করে পিডিবি যে অর্থ পায় তার থেকে ৮১ ভাগই ঘাটতিতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৪-২৫-এ ২৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকা ভর্তুকির প্রাক্কলন করা হয়েছে। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত তারা ভর্তুকি বাবদ পেয়েছে ২০০০ কোটি টাকা। বকেয়া রয়েছে ২৩ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। যদিও এই ভর্তুকির হিসাব আগামী জুন পর্যন্ত। পিডিবি বলছে, গত জুন মাসে পিডিবি সব শেষ আদানিকে বিদ্যুৎ বিল বাবদ ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। এরপর আদানিকে আর বিল পরিশোধ করা হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বহুলভাবে আদানির বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার বিষয়টি চর্চিত হচ্ছে। সাধারণ গ্রাহকরা লিখছেন, তারা নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করলেও আদানির বিদ্যুৎ বিল কেন বকেয়া থাকছে। এমন প্রশ্নে পিডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, পিডিবি সিঙ্গেল বায়ার হিসাবে দেশের উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় সবটুকু ক্রয় করে। এই বিদ্যুৎ আবার বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করে। এখানে আমরা যে দামে বিদ্যুৎ ক্রয় করি আর যে দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করি তার মধ্যে একটি বড় ঘাটতি থাকে। সরকার এই ঘাটতির অর্থ আমাদের ভর্তুকি হিসাবে দিয়ে থাকে। গত অর্থবছরে পিডিবিকে বিদ্যুতে ৪০ হাজার কোটি টাকার মতো ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার সময়মতো ভর্তুকির অর্থ পরিশোধ করতে না পারাতে এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। পিডিবি সূত্র বলছে, পিডিবি বিদ্যুৎ বিক্রি করে যে অর্থ পায় তা দিয়ে জ্বালানি কেনার পয়সাও সংস্থান করা সম্ভব হয় না। ফলে সরকার ভর্তুকির অর্থ ছাড় না করলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানির বকেয়া পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। আদানির বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সাংবাদিকদের জানান, আমরা সোনালী ব্যাংকে বলে রেখেছি আদানিকে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে দিতে। ওই পরিমাণ অর্থ সোনালী ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা হয়েছে। ব্যাংকে পর্যাপ্ত ডলার জমা হলেই আদানিকে অর্থ পরিশোধ করা হবে। এই বিষয়ে পিডিবির চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, আমরা আদানির বকেয়া বিল দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের যতটুকু সাধ্য সে টুকু দিচ্ছি। ডলার সংকটের কারণে বড় আকারে পরিশোধের সুযোগ নাই৷ বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক এবং পিডিবি মিলেই চেষ্টা করছি বকেয়া পরিশোধের। সর্বশেষ পরিশোধ জুনে হলেও আগের অনেক বকেয়া আছে বলেও তিনি জানান। কেবল আদানি নয়, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি এমনকি দেশের সরকারি-বেসরকারি যেসব কেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সবার বিদ্যুৎ বিক্রির অর্থই পিডিবির কাছে বকেয়া পড়েছে। বকেয়া পড়াতে এসব কেন্দ্রগুলো জ্বালানিও কিনতে পারছে না। সব থেকে বিপাকে পড়েছে দেশের কয়লাচালিত কেন্দ্রগুলো। এরমধ্যে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা প্রায় শেষের পথে। এর বাইরে রামপালে আর বড় জোর দিন দশেকের কয়লা মজুত রয়েছে। চট্টগ্রামের এসএস পাওয়ারেরও ১৫ দিনের কয়লা মজুত রয়েছে। এরমধ্যে কেন্দ্রগুলোতে কয়লা আনা সম্ভব না হলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে বিদ্যুতের লোডশেডিং আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। তবে এ দিক দিয়ে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের কয়লার মজুত নিশ্চিত করেছে বলে জানা গেছে। কয়লার বিষয়ে কোল পাওয়ার জেনারেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) বলেন, আমাদের যে কয়লা আছে তা দিয়ে আরও দেড় থেকে দুই মাস চলবে। নতুন করে কয়লা আনার চুক্তি করার আলোচনা চলছে। এরমধ্যে চুক্তি হয়ে যাবে বলে আশা করছি।
আদানিকে দেওয়া হচ্ছে পাওনার আংশিক
ট্যাগস :
আদানিকে দেওয়া হচ্ছে পাওনার আংশিক
জনপ্রিয় সংবাদ