বিশেষ সংবাদদাতা : চট্টগ্রামের ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার নিয়ে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া শুরু করলেও এখনও শঙ্কা কাটেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনাটি নিয়ে নানা পক্ষ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা এখনও করে যাচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে, যাতে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেউ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে। এজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি সাইবার স্পেসও মনিটরিং করা হচ্ছে। কেউ যাতে উসকানি দিয়ে পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সেজন্য তীক্ষ্ম নজরদারি চলছে। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পেশাদারত্বের সাথে আইনানুগ দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে পুলিশ কাজ করছে।’ পুলিশ সূত্র জানায়, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের পর থেকেই তার অনুসারীরা রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে চট্টগ্রামের আদালতে সোপর্দ করার পর বিচারক শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর থেকেই তার অনুসারীরা মূলত চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান আটকিয়ে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে নিতে বাধা দেয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সরিয়ে দিতে গেলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় একটি পক্ষ অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামকে তুলে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। আইনজীবীরা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসকন সমর্থকদের দায়ী করছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধের দাবিও করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, সাইফুল ইসলামকে হত্যাকাণ্ডের পর চট্টগ্রামসহ সারা দেশে চাপা উত্তেজনা তৈরি হয়। স্পর্শকাতর এই ঘটনা থেকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি হতে পারে শঙ্কায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে। একই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকেও সব মহলকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কর্মী-সমর্থকদের বিশৃঙ্খলা না করতে অনুরোধ করা হয়। পুলিশের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা সরকারের সতর্ক তৎপরতার কারণে বড় ধরণের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এখনও পুরোপুরি শঙ্কা কাটেনি। তৃতীয় পক্ষ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার পাঁয়তারা করছে। এ কারণে পুলিশের সকল ইউনিটকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, পুলিশ সদর দফতর থেকে সারা দেশে ইসকনের মন্দিরগুলোতে কারা অর্থায়ন করছে তার একটি তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা ইতোমধ্যে সেই তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে। বিভিন্ন এলাকায় ইসকনকে কারা সংগঠিত করার কাজ করছে তার খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বাইরে থেকে কোনও অর্থায়ন হয় কিনা তারও অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, তারা ইসকন মন্দিরগুলোর যে কমিটি রয়েছে তা পর্যালোচনা করে তালিকা তৈরি করেছেন। তার এলাকার তালিকা ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দফতরে পাঠিয়েও দিয়েছেন। ওই কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, তার এলাকায় বিদেশি অর্থায়নের কোনও তথ্য পাননি। স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যবসায়ীরা ইসকন অনুসারী হিসেবে অর্থায়ন করে বলে তথ্য পেয়েছেন। সেসব তথ্যই পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ইসকনের অনুসারীদের সমাবেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি নিয়ে কিছুটা চিন্তায় পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব সমাবেশে সদ্য ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোনও যোগসাজশ রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অস্থিতিশীলতার শঙ্কা কাটেনি সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
জনপ্রিয় সংবাদ