ঢাকা ০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
অবরোধে ক্রেতাহীন খাতুনগঞ্জ

অবরোধে ক্রেতাহীন খাতুনগঞ্জ

  • আপডেট সময় : ০২:১০:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ নভেম্বর ২০২৩
  • ১২২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধ-হরতালের প্রভাব পড়েছে দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্যে। অবরোধে দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীরা বাজারে আসতে পারেননি। দূরপাল্লার পণ্য পরিবহনকারী গাড়ি চলাচল সীমিত হয়ে গেছে। ক্রেতা কমে যাওয়ায় প্রায় অলস সময় কেটেছে আড়তদারদের। অলস সময় কাটছে শ্রমিকদেরও, প্রভাব পড়েছে তাদের দৈনন্দিন আয়ে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে বেচাকেনা, লেনদেন অনেক কম। সরবরাহ কমায় গুদামে জমছে ভোগ্যপণ্যের স্তূপ। আড়তে সারি সারি বস্তায় মজুত করা পণ্য, কিন্তু ক্রেতা নেই। খাতুনগঞ্জ-চাক্তাই থেকে তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও পর্যটন নগরী কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামে বিভাগের ১১টি জেলায় পণ্যের জোগান দেওয়া হয়। এর বাইরে সারাদেশেও অনেক পণ্য সরবরাহ করা হয় খাতুনগঞ্জ থেকে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা অবরোধে নাশকতার আশঙ্কায় দেশের জেলা-উপজেলা ও মোকামগুলো থেকে পণ্য নিতে ট্রাক বাজারে আসতে পারছে না। এর মধ্যেও যেসব ট্রাক ঝুঁকি নিয়ে বের হতে রাজি হচ্ছে, তাদের ভাড়াও হাঁকা হচ্ছে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। মাল নিতে আসা ট্রাকের সংখ্যা তাই কমে গেছে। ফলে আড়তে পণ্যের কোনো সংকট না থাকলেও পরিবহনের সংকটে পণ্য বিক্রি কমে গেছে উদ্বেগজনক হারে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে প্রান্তিক পর্যায়ে সরবরাহ কমে পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ২৯ অক্টোবরের হরতাল শেষে বিএনপি-জামায়াত টানা তিন দিন সর্বাত্মক অবরোধের ডাক দেয়। সে কর্মসূচি শেষ হওয়ার মুহূর্তে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফের এ সপ্তাহের প্রথম দুই কর্মদিবসে অবরোধ ঘোষণা করে বিএনপি-জামায়াত। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে বিএনপি। দ্বিতীয় দফা অবরোধের প্রথম দিন রোববার (৫ নভেম্বর) সকালে বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে কিছু ট্রাক এলেও খাতুনগঞ্জে নেই চিরচেনা ব্যস্ততা। আড়তদাররা দোকান খুলে বসে থাকলেও ক্রেতাদের উপস্থিতি দেখা গেছে সামান্য। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘অবরোধের কারণে পরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। গাড়ি ভাড়া বেশি চাওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামের বাইরের ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্য কিনতে আসতে পারছে না। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমে এসেছে। আমরা ক্ষতির মুখে পড়েছি। ক্রেতা নেই, বেচাকেনা কম। আমার এখানে ১৫ জন স্টাফ। তাদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছি। তবে বাজারে কোনো পণ্যের সংকট নেই। অবরোধ থাকলেও এখানে সব খোলা। ব্যাংক থেকে শুরু করে সব।’ খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মো. ছগীর আহম্মদ বলেন, ‘অবরোধ ও হরতাল দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো আদৌ কিছু পায় কি না, আমি জানি না। গাড়ি পোড়ানো রাজনীতি না, এটা সন্ত্রাসী কর্মকা-। অবরোধ-হরতাল দিয়ে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করলে কোন মালিক তার গাড়ি রাস্তায় বের করতে দেবে? আমরা ব্যবসায়ীরাই তো দেশের চালিকাশক্তি। কিন্তু বারবার আমাদের টার্গেট করা হয়। বোমা ও আগুনের ভয়ে কেউ গাড়ি বের করছে না। ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছে।’
কুমিল্লার বাসিন্দা আবু বক্কর পরিবার নিয়ে থাকেন চট্টগ্রাম নগরীতে। কাজ করেন খাতুনগঞ্জের একটি মসলার আড়তের খালাসি শ্রমিক হিসেবে। এমনিতেই বছরের ১২ মাসে মসলার বেচাকেনা কম থাকে। গত এক সপ্তাহ ধরে বিএনপি-জামায়াতের টানা অবরোধে খাতুনগঞ্জে গাড়ি আসতে না পারায় আড়ত থেকে পণ্য বিক্রি আরও কমে গেছে। এ অবস্থায় বক্করের গত তিনদিন ধরে কোনো আয় হয়নি। ছয় সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ নিয়ে এখন দুশ্চিন্তা বক্করের। আবু বক্কর বলেন, ‘আমরা শ্রমিক মানুষ। দিন এনে দিন খাই। একদিন রোজগার না থাকলে বউ-ছেলে-মেয়ে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। আমাদের কথা সরকার ভাবে না। রাজনীতি তো করি না, তবে একটু একটু বুঝি। আমরা শ্রমিকরা যে না খেয়ে আছি, এগুলো কি রাজনীতিবিদরা ভাবেন? হরতাল করে গাড়ি পুড়ানো আমরা কেউ সমর্থন করি না।’ বৃহত্তর খাতুনগঞ্জ লোডিং-আনলোডিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে মোট শ্রমিক পাঁচ হাজারের মতো। এর মধ্যে তিন হাজার শ্রমিক তালিকাভুক্ত। অবরোধে খাতুনগঞ্জে সব কিছু স্বাভাবিক থাকলেও ক্রেতা নেই বললেই চলে। তাই অনেক শ্রমিক কাজ না পেয়ে বসে আছে। অনেকেই বাড়ি চলে গেছে। অনেক গুদামে পণ্য রাখার জায়গা নেই।’

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সংগঠনের প্রতি উমামার কমিটমেন্ট ছিল কি না, প্রশ্ন রিফাতের

অবরোধে ক্রেতাহীন খাতুনগঞ্জ

অবরোধে ক্রেতাহীন খাতুনগঞ্জ

আপডেট সময় : ০২:১০:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ নভেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধ-হরতালের প্রভাব পড়েছে দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্যে। অবরোধে দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীরা বাজারে আসতে পারেননি। দূরপাল্লার পণ্য পরিবহনকারী গাড়ি চলাচল সীমিত হয়ে গেছে। ক্রেতা কমে যাওয়ায় প্রায় অলস সময় কেটেছে আড়তদারদের। অলস সময় কাটছে শ্রমিকদেরও, প্রভাব পড়েছে তাদের দৈনন্দিন আয়ে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে বেচাকেনা, লেনদেন অনেক কম। সরবরাহ কমায় গুদামে জমছে ভোগ্যপণ্যের স্তূপ। আড়তে সারি সারি বস্তায় মজুত করা পণ্য, কিন্তু ক্রেতা নেই। খাতুনগঞ্জ-চাক্তাই থেকে তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও পর্যটন নগরী কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামে বিভাগের ১১টি জেলায় পণ্যের জোগান দেওয়া হয়। এর বাইরে সারাদেশেও অনেক পণ্য সরবরাহ করা হয় খাতুনগঞ্জ থেকে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা অবরোধে নাশকতার আশঙ্কায় দেশের জেলা-উপজেলা ও মোকামগুলো থেকে পণ্য নিতে ট্রাক বাজারে আসতে পারছে না। এর মধ্যেও যেসব ট্রাক ঝুঁকি নিয়ে বের হতে রাজি হচ্ছে, তাদের ভাড়াও হাঁকা হচ্ছে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। মাল নিতে আসা ট্রাকের সংখ্যা তাই কমে গেছে। ফলে আড়তে পণ্যের কোনো সংকট না থাকলেও পরিবহনের সংকটে পণ্য বিক্রি কমে গেছে উদ্বেগজনক হারে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে প্রান্তিক পর্যায়ে সরবরাহ কমে পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ২৯ অক্টোবরের হরতাল শেষে বিএনপি-জামায়াত টানা তিন দিন সর্বাত্মক অবরোধের ডাক দেয়। সে কর্মসূচি শেষ হওয়ার মুহূর্তে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফের এ সপ্তাহের প্রথম দুই কর্মদিবসে অবরোধ ঘোষণা করে বিএনপি-জামায়াত। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে বিএনপি। দ্বিতীয় দফা অবরোধের প্রথম দিন রোববার (৫ নভেম্বর) সকালে বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে কিছু ট্রাক এলেও খাতুনগঞ্জে নেই চিরচেনা ব্যস্ততা। আড়তদাররা দোকান খুলে বসে থাকলেও ক্রেতাদের উপস্থিতি দেখা গেছে সামান্য। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘অবরোধের কারণে পরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। গাড়ি ভাড়া বেশি চাওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামের বাইরের ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্য কিনতে আসতে পারছে না। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমে এসেছে। আমরা ক্ষতির মুখে পড়েছি। ক্রেতা নেই, বেচাকেনা কম। আমার এখানে ১৫ জন স্টাফ। তাদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছি। তবে বাজারে কোনো পণ্যের সংকট নেই। অবরোধ থাকলেও এখানে সব খোলা। ব্যাংক থেকে শুরু করে সব।’ খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মো. ছগীর আহম্মদ বলেন, ‘অবরোধ ও হরতাল দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো আদৌ কিছু পায় কি না, আমি জানি না। গাড়ি পোড়ানো রাজনীতি না, এটা সন্ত্রাসী কর্মকা-। অবরোধ-হরতাল দিয়ে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করলে কোন মালিক তার গাড়ি রাস্তায় বের করতে দেবে? আমরা ব্যবসায়ীরাই তো দেশের চালিকাশক্তি। কিন্তু বারবার আমাদের টার্গেট করা হয়। বোমা ও আগুনের ভয়ে কেউ গাড়ি বের করছে না। ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছে।’
কুমিল্লার বাসিন্দা আবু বক্কর পরিবার নিয়ে থাকেন চট্টগ্রাম নগরীতে। কাজ করেন খাতুনগঞ্জের একটি মসলার আড়তের খালাসি শ্রমিক হিসেবে। এমনিতেই বছরের ১২ মাসে মসলার বেচাকেনা কম থাকে। গত এক সপ্তাহ ধরে বিএনপি-জামায়াতের টানা অবরোধে খাতুনগঞ্জে গাড়ি আসতে না পারায় আড়ত থেকে পণ্য বিক্রি আরও কমে গেছে। এ অবস্থায় বক্করের গত তিনদিন ধরে কোনো আয় হয়নি। ছয় সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ নিয়ে এখন দুশ্চিন্তা বক্করের। আবু বক্কর বলেন, ‘আমরা শ্রমিক মানুষ। দিন এনে দিন খাই। একদিন রোজগার না থাকলে বউ-ছেলে-মেয়ে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। আমাদের কথা সরকার ভাবে না। রাজনীতি তো করি না, তবে একটু একটু বুঝি। আমরা শ্রমিকরা যে না খেয়ে আছি, এগুলো কি রাজনীতিবিদরা ভাবেন? হরতাল করে গাড়ি পুড়ানো আমরা কেউ সমর্থন করি না।’ বৃহত্তর খাতুনগঞ্জ লোডিং-আনলোডিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে মোট শ্রমিক পাঁচ হাজারের মতো। এর মধ্যে তিন হাজার শ্রমিক তালিকাভুক্ত। অবরোধে খাতুনগঞ্জে সব কিছু স্বাভাবিক থাকলেও ক্রেতা নেই বললেই চলে। তাই অনেক শ্রমিক কাজ না পেয়ে বসে আছে। অনেকেই বাড়ি চলে গেছে। অনেক গুদামে পণ্য রাখার জায়গা নেই।’