ঢাকা ১০:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

অন্তর্বতী সরকারের কাছে ডিবিএ’র ৩০ দাবি

  • আপডেট সময় : ০১:৫০:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ অগাস্ট ২০২৪
  • ১৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতী সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে ৩০ দফা দাবি জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)। গতকাল সোমবার ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ডিবিএ’র পক্ষে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম খাইরুল হোসেন এবং অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরা হয়। এই চেয়ারম্যান দীর্ঘ সময় অপেশাদার এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড করায় বাজারের কোনো উন্নতি হয়নি বরং বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে এসে পৌঁছায় বলেও অভিযোগ করে ডিবিএ। এ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারের টেকসই ও বাস্তবমুখী উন্নয়ন, তথা বাজারের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ৩০টি দাবি তুলে ধরে ডিবিএ। এর মধ্যে রয়েছে-
অবিলম্বে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি থেকে সব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে অপসারণ করা।
বিগত দুই কমিশনের সব অনিয়ম ও দুর্নীতি উদ্ঘাটনে অভিজ্ঞ ও সৎ ব্যক্তির সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা এবং তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের অর্পিত দায়িত্বের খেয়ানত ও দুর্নীতি-অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা জন্য আইনের আওতায় আনা।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিতে অবশ্যই সৎ, যেকোনো চাপের মুখে অন্যায়কে রুখতে পারে এমন দৃঢ় মানসিকতা সম্পন্ন এবং পুঁজিবাজার ও দেশের অর্থনীতি বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের চেয়ারম্যান ও কমিশনার পদে নিয়োগ নিয়ে কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো অবস্থায় রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ন্যায় অনুরূপ ‘সার্চ কমিটি’ গঠন করে বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনার এবং স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও পরিচালক পদে নিয়োগের বিধান করতে হবে।
ড. খায়রুল এবং শিবলী কমিশনের দুর্নীতি-অনিয়ম ও বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের বিষয়ে প্রশ্ন তোলায় এবং অপকর্মের সহযোগি হতে রাজি না হওয়ায় বিএসইসির কিছু সৎ ও দায়িত্ববান কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানারূপ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অবলম্বে তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া সব অন্যায্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহার এবং দক্ষতা, যোগ্যতা অনুযায়ী উপযুক্ত বিভাগে পদায়ন করতে হবে।
বিএসইসির কমিশন অর্থাৎ চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের সমন্বয়ে গঠিত কমিশনকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে কমিশন থেকে নির্বাহী বিভাগকে আলাদা করতে হবে।
বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জে অভিজ্ঞতা অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগ্য ও সৎ কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে হবে।
বিএসইসির নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তা ও পরিচালকসহ সব কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পৃথক ক্ষমতাসহ অর্পন করতে হবে। নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তারা বিএসইসির আইন ও বিধির দ্বারা সব কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। কমিশনের চেয়ারম্যান বা কমিশনাররা নির্বাহী বিভাগের স্বাভাবিক কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।
একইভাবে দেশের স্টক এক্সচেঞ্জ, সিডিবিএল এবং সিসিবিএলের পর্ষদ পুনর্গঠন করতে হবে।
বিগত দুই কমিশন শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিরোধী যে সব আইন ও বিধি প্রণয়ন করেছে, তা বাতিল বা সংশোধন করে বাস্তবমুখী আইন প্রণয়ন করতে হবে। এ জন্য বিদ্যমান সব আইন ও বিধিমালা পর্যালোচনা করে সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে।
শেয়ারবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে প্রসিদ্ধ অর্থনীতিবিদ, চার্টার্ট অ্যাকাউন্টেন্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস, শিক্ষাবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সরকারের সব নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ও উপযুক্ত কর্মকর্তা এবং সাংবাদিক, উপযুক্ত অন্যান্য পেশাজীবীদের সমন্বয়ে একটি কার্যকর ও সক্রিয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করতে হবে। এ উপদেষ্টা পরিষদ প্রতি মাসে সভা করবে এবং কমিশনের সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে উপযুক্ত পরামর্শ প্রদান করবে। সংকটের সময় বা এ বাজারের উন্নয়নে এ পরিষদ নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করবে।
শেয়ারবাজারের উত্থান-পতন একটা স্বাভাবিক ঘটনা। ভবিষ্যতে কখনো বড় দরপতন হলেও কোনো অবস্থায় যাতে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বা সার্কিট ব্রেকার নিয়ন্ত্রণ করে বাজারে প্রত্যক্ষভাবে হস্তক্ষেপ না করা হয়, তার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
বিগত কমিশন যেসব নতুন ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে, তা কিসের ভিত্তিতে দিয়েছে, এক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেন হয়েছে কিনা, তার তদন্ত করতে হবে।
বিদেশে বিনিয়োগ রোডশোর নামে কারা কীভাবে দেশের অর্থ অপচয়, আত্মসাত ও মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করেছে, তা উদ্ঘাটনে তদন্ত করতে হবে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে অর্থনীতি, ব্যবসায়, আর্থিক হিসাব, আইনসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে কে কোন ধরনের কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম তা উল্লেখপূর্বক একটি স্বতন্ত্র পরিচালক প্যানেল গঠন করতে হবে। যা নিয়মিত আপটেড করা হবে। এই প্যানেল থেকে উপযুক্ত ব্যক্তিদের দ্বৈত নির্বাচনের ভিত্তিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নির্বাচন করতে হবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে। এ জন্য প্রয়োজনে নির্দেশনা জারি করতে হবে।
আইপিও, রাইট ইস্যু প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে আইপিও বিধিমালার উপযুক্ত সংশোধন করতে হবে। এক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জের স্বতন্ত্র ও স্বাধীন মূল্যায়ন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
আইপিও অনুমোদনের পরও কোনো ব্যত্যয় পাওয়া গেলে ওই কোম্পানির আইপিও বাতিলের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং কোন কোম্পানিকে স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত করবে, কোনটিকে করবে না, তার যৌক্তিক অধিকার স্টক এক্সচেঞ্জকে ব্যবহারের ক্ষমতা দিতে হবে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো বাস্তব কার্যক্রম চলছে কিনা, না চললে তা স্বাধীনভাবে তদন্ত ও পরিদর্শন করার ক্ষমতা স্টক এক্সচেঞ্জকে দিতে হবে।
লিস্টিং আইনের গুরুতর ব্যত্যয় হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির লেনদেন স্থগিত বা তালিকাচ্যুত করার স্বাধীন ক্ষমতা স্টক এক্সচেঞ্জকে দিতে হবে। লিস্টিং রেগুলেশন অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা স্টক এক্সচেঞ্জকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
অবিলম্বে বন্ধ কোম্পানিগুলোকে তালিকাচ্যুত বা বিকল্প উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনোভাবে বছরের পর বছর বন্ধ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন শেয়ারবাজারে করা যাবে না।
স্টক এক্সচেঞ্জ স্বতন্ত্রভাবে সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারে শেয়ার কারসাজি শনাক্তে স্বতন্ত্রভাবে সার্ভিল্যান্স পরিচালনা করবে। এ ক্ষেত্রে কারসাজির প্রমাণ পেলে স্টক এক্সচেঞ্জের সুপারিশ আমলে নিয়ে দ্রুততম সময়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বাজারের শৃঙ্খলা রক্ষায় বিএসইসিকে সহযোগিতা করতে হবে।
কারসাজির প্রমাণ হলে নামমাত্র বা শুধুই আর্থিক জরিমানা না করে কারসাজির ব্যপকতা, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতা বিবেচনায় ফৌজদারি মামলা করতে হবে।
শেয়ার কারসাজি শনাক্তে বিদ্যমান সার্ভিল্যান্স ব্যবস্থার বাইরে মার্কেন্ট মনিটরিং এবং ইন্টিলিজেন্স বিভাগকে উপযুক্ত ও পর্যাপ্ত কর্মী দিয়ে শক্তিশালী করতে হবে।
অসৎ ও অর্থলিপ্সু ব্যক্তিদের হাতে তুলে দিয়ে বিগত দুই কমিশন মিউচুয়াল ফান্ড খাতকে ধ্বংস করেছে। অবিলম্বে এ খাত ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে প্রকৃত পেশাদার ফান্ড ম্যানেজারদের কাছে ফান্ডগুলোর ব্যবস্থাপনা হস্তান্তরে উদ্যোগ নিতে হবে। সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহে কোনোরূপ বাধা দেওয়া চলবে না। তাদের কমিশন বা স্টক এক্সচেঞ্জে প্রবেশে কোনো অবস্থাতেই কোনো প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না।
গণমাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত প্রতিবেদন প্রকাশ বা প্রচার হলে, সে বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে সর্বসাধারণে বিএসইসি বা ডিএসইকে বিবৃতি দিয়ে প্রকৃত ঘটনা এবং প্রতিবেদন সত্য হলে দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে হবে।
জবাবদিহিতার স্বার্থে বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জকে প্রতি মাসে সর্বসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতমূলক গণ শুনানির আয়োজন করতে হবে।
ব্রোকার প্রতিষ্ঠানসহ সব বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপানো অন্যায্য ফি কমাতে হবে।

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার লার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

গুমের তথ্য চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি কমিশনের

অন্তর্বতী সরকারের কাছে ডিবিএ’র ৩০ দাবি

আপডেট সময় : ০১:৫০:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ অগাস্ট ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতী সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে ৩০ দফা দাবি জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)। গতকাল সোমবার ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ডিবিএ’র পক্ষে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম খাইরুল হোসেন এবং অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরা হয়। এই চেয়ারম্যান দীর্ঘ সময় অপেশাদার এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড করায় বাজারের কোনো উন্নতি হয়নি বরং বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে এসে পৌঁছায় বলেও অভিযোগ করে ডিবিএ। এ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারের টেকসই ও বাস্তবমুখী উন্নয়ন, তথা বাজারের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ৩০টি দাবি তুলে ধরে ডিবিএ। এর মধ্যে রয়েছে-
অবিলম্বে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি থেকে সব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে অপসারণ করা।
বিগত দুই কমিশনের সব অনিয়ম ও দুর্নীতি উদ্ঘাটনে অভিজ্ঞ ও সৎ ব্যক্তির সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা এবং তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের অর্পিত দায়িত্বের খেয়ানত ও দুর্নীতি-অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা জন্য আইনের আওতায় আনা।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিতে অবশ্যই সৎ, যেকোনো চাপের মুখে অন্যায়কে রুখতে পারে এমন দৃঢ় মানসিকতা সম্পন্ন এবং পুঁজিবাজার ও দেশের অর্থনীতি বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের চেয়ারম্যান ও কমিশনার পদে নিয়োগ নিয়ে কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো অবস্থায় রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ন্যায় অনুরূপ ‘সার্চ কমিটি’ গঠন করে বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনার এবং স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও পরিচালক পদে নিয়োগের বিধান করতে হবে।
ড. খায়রুল এবং শিবলী কমিশনের দুর্নীতি-অনিয়ম ও বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের বিষয়ে প্রশ্ন তোলায় এবং অপকর্মের সহযোগি হতে রাজি না হওয়ায় বিএসইসির কিছু সৎ ও দায়িত্ববান কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানারূপ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অবলম্বে তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া সব অন্যায্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহার এবং দক্ষতা, যোগ্যতা অনুযায়ী উপযুক্ত বিভাগে পদায়ন করতে হবে।
বিএসইসির কমিশন অর্থাৎ চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের সমন্বয়ে গঠিত কমিশনকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে কমিশন থেকে নির্বাহী বিভাগকে আলাদা করতে হবে।
বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জে অভিজ্ঞতা অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগ্য ও সৎ কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে হবে।
বিএসইসির নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তা ও পরিচালকসহ সব কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পৃথক ক্ষমতাসহ অর্পন করতে হবে। নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তারা বিএসইসির আইন ও বিধির দ্বারা সব কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। কমিশনের চেয়ারম্যান বা কমিশনাররা নির্বাহী বিভাগের স্বাভাবিক কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।
একইভাবে দেশের স্টক এক্সচেঞ্জ, সিডিবিএল এবং সিসিবিএলের পর্ষদ পুনর্গঠন করতে হবে।
বিগত দুই কমিশন শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিরোধী যে সব আইন ও বিধি প্রণয়ন করেছে, তা বাতিল বা সংশোধন করে বাস্তবমুখী আইন প্রণয়ন করতে হবে। এ জন্য বিদ্যমান সব আইন ও বিধিমালা পর্যালোচনা করে সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে।
শেয়ারবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে প্রসিদ্ধ অর্থনীতিবিদ, চার্টার্ট অ্যাকাউন্টেন্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস, শিক্ষাবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সরকারের সব নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ও উপযুক্ত কর্মকর্তা এবং সাংবাদিক, উপযুক্ত অন্যান্য পেশাজীবীদের সমন্বয়ে একটি কার্যকর ও সক্রিয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করতে হবে। এ উপদেষ্টা পরিষদ প্রতি মাসে সভা করবে এবং কমিশনের সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে উপযুক্ত পরামর্শ প্রদান করবে। সংকটের সময় বা এ বাজারের উন্নয়নে এ পরিষদ নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করবে।
শেয়ারবাজারের উত্থান-পতন একটা স্বাভাবিক ঘটনা। ভবিষ্যতে কখনো বড় দরপতন হলেও কোনো অবস্থায় যাতে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বা সার্কিট ব্রেকার নিয়ন্ত্রণ করে বাজারে প্রত্যক্ষভাবে হস্তক্ষেপ না করা হয়, তার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
বিগত কমিশন যেসব নতুন ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে, তা কিসের ভিত্তিতে দিয়েছে, এক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেন হয়েছে কিনা, তার তদন্ত করতে হবে।
বিদেশে বিনিয়োগ রোডশোর নামে কারা কীভাবে দেশের অর্থ অপচয়, আত্মসাত ও মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করেছে, তা উদ্ঘাটনে তদন্ত করতে হবে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে অর্থনীতি, ব্যবসায়, আর্থিক হিসাব, আইনসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে কে কোন ধরনের কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম তা উল্লেখপূর্বক একটি স্বতন্ত্র পরিচালক প্যানেল গঠন করতে হবে। যা নিয়মিত আপটেড করা হবে। এই প্যানেল থেকে উপযুক্ত ব্যক্তিদের দ্বৈত নির্বাচনের ভিত্তিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নির্বাচন করতে হবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে। এ জন্য প্রয়োজনে নির্দেশনা জারি করতে হবে।
আইপিও, রাইট ইস্যু প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে আইপিও বিধিমালার উপযুক্ত সংশোধন করতে হবে। এক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জের স্বতন্ত্র ও স্বাধীন মূল্যায়ন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
আইপিও অনুমোদনের পরও কোনো ব্যত্যয় পাওয়া গেলে ওই কোম্পানির আইপিও বাতিলের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং কোন কোম্পানিকে স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত করবে, কোনটিকে করবে না, তার যৌক্তিক অধিকার স্টক এক্সচেঞ্জকে ব্যবহারের ক্ষমতা দিতে হবে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো বাস্তব কার্যক্রম চলছে কিনা, না চললে তা স্বাধীনভাবে তদন্ত ও পরিদর্শন করার ক্ষমতা স্টক এক্সচেঞ্জকে দিতে হবে।
লিস্টিং আইনের গুরুতর ব্যত্যয় হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির লেনদেন স্থগিত বা তালিকাচ্যুত করার স্বাধীন ক্ষমতা স্টক এক্সচেঞ্জকে দিতে হবে। লিস্টিং রেগুলেশন অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা স্টক এক্সচেঞ্জকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
অবিলম্বে বন্ধ কোম্পানিগুলোকে তালিকাচ্যুত বা বিকল্প উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনোভাবে বছরের পর বছর বন্ধ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন শেয়ারবাজারে করা যাবে না।
স্টক এক্সচেঞ্জ স্বতন্ত্রভাবে সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারে শেয়ার কারসাজি শনাক্তে স্বতন্ত্রভাবে সার্ভিল্যান্স পরিচালনা করবে। এ ক্ষেত্রে কারসাজির প্রমাণ পেলে স্টক এক্সচেঞ্জের সুপারিশ আমলে নিয়ে দ্রুততম সময়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বাজারের শৃঙ্খলা রক্ষায় বিএসইসিকে সহযোগিতা করতে হবে।
কারসাজির প্রমাণ হলে নামমাত্র বা শুধুই আর্থিক জরিমানা না করে কারসাজির ব্যপকতা, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতা বিবেচনায় ফৌজদারি মামলা করতে হবে।
শেয়ার কারসাজি শনাক্তে বিদ্যমান সার্ভিল্যান্স ব্যবস্থার বাইরে মার্কেন্ট মনিটরিং এবং ইন্টিলিজেন্স বিভাগকে উপযুক্ত ও পর্যাপ্ত কর্মী দিয়ে শক্তিশালী করতে হবে।
অসৎ ও অর্থলিপ্সু ব্যক্তিদের হাতে তুলে দিয়ে বিগত দুই কমিশন মিউচুয়াল ফান্ড খাতকে ধ্বংস করেছে। অবিলম্বে এ খাত ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে প্রকৃত পেশাদার ফান্ড ম্যানেজারদের কাছে ফান্ডগুলোর ব্যবস্থাপনা হস্তান্তরে উদ্যোগ নিতে হবে। সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহে কোনোরূপ বাধা দেওয়া চলবে না। তাদের কমিশন বা স্টক এক্সচেঞ্জে প্রবেশে কোনো অবস্থাতেই কোনো প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না।
গণমাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত প্রতিবেদন প্রকাশ বা প্রচার হলে, সে বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে সর্বসাধারণে বিএসইসি বা ডিএসইকে বিবৃতি দিয়ে প্রকৃত ঘটনা এবং প্রতিবেদন সত্য হলে দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে হবে।
জবাবদিহিতার স্বার্থে বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জকে প্রতি মাসে সর্বসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতমূলক গণ শুনানির আয়োজন করতে হবে।
ব্রোকার প্রতিষ্ঠানসহ সব বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপানো অন্যায্য ফি কমাতে হবে।